আমরা যে কাজই করি না কেন, তাতে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
আল্লাহ যেহেতু আমাদের স্রষ্টা, রিজিকদাতা, পালনকর্তা ও বিধানদাতা; তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার হুকুমকেই সামনে রাখতে হবে।
তিনি যা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা ছাড়তে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটাই প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য।
নিজের খেয়ালখুশিমত চলা হলো শয়তান ও পশুর কাজ। মানুষের জন্য নিজের প্রবৃত্তি অনুযায়ী জীবন যাপন করা শোভা পায় না।
মানুষের শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ এখানেই নিহিত। আল্লাহর ইচ্ছের সামনে বান্দা নিজের সব ইচ্ছে ও আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিবে, এতেই তার সফলতা ও প্রকৃত বিজয়। বান্দা যে কাজই করবে, তা হতে হবে আল্লাহর জন্য।
আমাদের ভালো কাজ অনেক সময় মন্দ কাজে পরিণত হয় একটি মাত্র ভুলের কারণে। আর তা হল নিয়ত ঠিক না থাকা।
আমরা দ্বীনের কাজই করি, কিন্তু উদ্দেশ্য থাকে লোক দেখানো। লোকে আমাকে ভালো বলবে। নামাজ পড়লে নামাজি বলবে। জাকাত দিলে দাতা বলবে। হজ করলে হাজি বলবে।
এরকম নানা ধরনের ভ্রান্ত নিয়ত থাকায় আমার সব নেক আমল বরবাদ হয়ে যায়। অথচ, এই আমল আমি কতো কষ্ট মুজাহাদা করে করেছি।
এর পেছনে কতো সময় ব্যয় করেছি। একটিমাত্র ভুলের কারণে আমার পুরো কষ্ট, সময় সব বরবাদ।
মনে রাখতে হবে, কোনো কাজ যখন কেবল আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হয়, তখন সেই কাজকে পূর্ণ ও সফল করার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিয়ে নেন। তার জন্য কোনো কৌশল করার প্রয়োজন পড়ে না।
আমরা দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে কতো বে-দ্বীনের কাজ করে ফেলি। গোনাহকে মাধ্যম বানাই দ্বীন প্রচারের। অথচ, এটা সরাসরি শয়তানের ধোঁকা বৈ কিছুই নয়।
যেকোনো কাজ, নেক আমলে পরিণত হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো নিয়ত ঠিক থাকা। নিয়তে গড়মিল হলে অনেক ক্ষেত্রে বাহ্যত নেক আমলও গোনাহের কাজে পরিণত হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা নামাজ আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নেসা : আয়াত ১৪২)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) শুনিয়ে দিবেন। আর যে লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) দেখিয়ে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আবার কেউ নেক আমল করে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টিই চায়। আল্লাহর সন্তুষ্টিও চায় আবার নিজেদের সুনামও চায়।
এমন লোকদের ভালো কাজও আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাদের আমল বরবাদ হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নবীজি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) হতে সব অংশীদারের তুলনায় বেশী মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সঙ্গে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়টিকেই বর্জন করি। (মুসলিম)
এজন্য আমরা যে কাজই করি, তাতে নিয়তকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে। রিয়া বা লোকদেখানোর প্রবণতাকে অন্তর থেকে দূর করতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সব আমলকে কবুল করুন। আমিন।