পিরোজপুর প্রতিনিধি :: পিরোজপুরের নেছারবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ও জ্বরের রোগী প্রকট আকার ধারণ করেছে। ধারন ক্ষমতার চেয়ে তিনগুন রোগীর সংখ্যা বাড়ায় তারা বেড না পেয়ে মেঝেতে সিড়ির পাশে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের কাগজ-কলমে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও উনিশ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকায় তারা বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগীরা হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে এভাবে চিকিৎসা নেওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন ভবন সংকট দূর না হওয়া পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে এভাবে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় ২২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৪০জন রোগী ভর্তি রয়েছে। ডায়রিয়ার সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে হাসপাতালে জ্বরের রোগীর সংখ্যা ও বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি রয়েছে। ১৯ বেডে হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় ১৯৬৫ সালে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যার ভবন কার্যক্রম শুরু হয়। পড়ে ২০১০ সালে ৩ আগস্ট ১৯ শয্যার নতুন একটি ভবনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পুরাতন ৩১ শয্যার বেড এবং নতুন ১৯ শয্যার বেড মিলিয়ে মোট ৫০ শয্যার বেডে চলতে থাকে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। পরে ৩১ শয্যার ভবনটি পুরাতন ও ঝরাজীর্ন হয়ে পড়লে ২০২০ সালে সেটি অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে কাগজ-কলমে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও উনিশ শয্যার ভবনে চলছে হাসপাতালে পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম।
হাসপাতালের রেজিস্টার সূত্রে জানা যায, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে জরুরি ও বর্হি বিভাগে ১০ হাজার লোক চিকিৎসা নিয়েছেন। ৪ এপ্রিল(মঙ্গলবার) এক দিনে হাসপাতালে ইনডোরে ৮৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার প্রায় অর্ধেক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখাযায়, ওই সব শিশুরা ওয়ার্ডের বেডে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালে বারান্দায় চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার ভিতরে রোগী সহ সাথে থাকা স্বজনরা ঠাসাঠাসি করে কেউ নার্স কেউবা চিকিৎকের কাছে দৌড়াচ্ছেন। ঠান্ডায় ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে শিশুরা আরো রোগাক্রান্ত পড়ছেন বলে অভিযোগ স্বজনদের। একইসাথে গিঞ্জি পরিবেশে হাসপাতালের যত্রতত্র মেজেতে শুয়ে চিকিৎসা নেয়ার কারনে রোগীদের মধ্য চরম দুর্ভোগ দেখা গেছে।
উপজেলা জগনাথকাঠি গ্রাম থেকে আসা আবু সালেক নামে এক বৃদ্ধ লোক বলেন আমার স্ত্রী বয়স্ক মানুষ। গত জ্বর নিয়ে গত দু’দিন ধরে হাসপাতালে। এখানে এসে দেখি রোগীরা বেডে জায়গা না পেয়ে তারা যত্রতত্র চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। নিরুপায় হয়ে আমার স্ত্রীকে মেজেতে রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এত রোগীর ভীড়ে রোগী পুনরায় অসুস্থ হলে সহসা নার্স ডাকতেও পারছিনা।
হাসপাতালের নিপা নামে এক সেবিকা জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রোগী বৃদ্ধির কারণে তাদের জায়গা দিতে না পেরে হাসপাতালে যেখানে সেখানে চাদর পিছিয়ে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এত অল্প জায়গায় রোগীর ভিড়ে তাদের চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। রোগীর চাপ সামাল দিতে অতি দ্রুত আমাদের একটি নতুন ভবন দরকার। অন্যথায় এভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়লে আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার সুটিয়াকাঠি গ্রাম থেকে আসা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া এক শিশু রোগীর মা জিনিয়া বলেন, আমার শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের বেড না পেয়ে গত তিন দিন ধরে এখানে নোংরা ফ্লোরে বসে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।
হাসপাতালে মা ও শিশু বিষয়ে অভিজ্ঞ আবাসিক ডাক্তার আসাদুজ্জামান বলেন,ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এই অল্প জায়গায় অনেক রোগী চিকিৎসা দিতে কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখানে বেশি আসে। তাদের বেডে জায়গা নিতে না পেরে অনেক রোগীর অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে নতুন ভবন নির্মান অতীব জরুরী।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, জেলার মধ্য নেছারাবাদ উপজেলা একটি জনবহুল এলাকা। এখানে উপজেলার মানুষ ছাড়াও পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে অনেক রোগী এখানের আউটডোর এবং ইনডোরে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কাগজ কলমে হাসপাতালটি ৫০শয্যার। তবে পুরাতন ৩১ শয্যার ভবনটি ঝড়াজীর্ন হওয়ায় সেটি অপসারন করা হয়েছে। বর্তমানে ১৯ বেডের এ হাসপাতালে গড়ে আশি জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার উপরে বর্তমানে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গত চব্বিশ ঘন্টায় ২৭ জন রোগী ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে। যার মধ্য অধিকাংশ শিশু রোগী রয়েছে। নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত রোগী বাড়লে মেজেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। এখানে নতুন ভবন নির্মান জরুরী হয়ে পড়েছে।