চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় অগ্নিদগ্ধ ও গলাকাটা লাশ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।সংবাদ সম্মেলনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, এএসসি রাজিউর রহমান, ডিবির ওসি আছলাম আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, ওই হত্যার রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান (৫০) ও তার মেয়ে রুপালী বেগম হত্যার কারণসহ নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি জানান, শনিবার দুপুরের পর আদালতে স্বীকারোক্তিতে রূপালী জানায়, পরকীয়া প্রেমিককে শায়েস্তা করতেই সেলিম প্রামাণিককে (৩২) নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নেয় তারা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পরে গলা কেটে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলে খুনিরা। নিহত সেলিম প্রামাণিক দুপচাঁচিয়ার খিদিরপাড়া গ্রামের কফির উদ্দিনের ছেলে ও পেশায় একজন রংমিস্ত্রি।
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাতে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, নিহত সেলিম ও রুপালীর মধ্যে ছোটবেলায় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের দুজনের বিয়ে অন্যত্র হলেও মুঠোফোনে তাদের যোগাযোগ ছিল। এছাড়া রুপালীর স্বামী ইকরামুল দেড় বছর যাবত সৌদি আরবে থাকেন। ফলে স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর সেলিম ও রুপালীর পরকীয়া আরও গভীর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে একান্তে মিলিত হয় তারা। একপর্যায়ে সেলিমকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রুপালী তা নাকচ করে দেয়।
এ দিকে, একান্তে মিলিত হওয়ার দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখতো সেলিম। রুপালীর বিয়েতে অসম্মতির পর সে ক্ষুব্ধ হয় ইমোর মাধ্যমে সেই ভিডিও সৌদিতে অবস্থানরত রুপালীর স্বামী ইকরামুলের কাছে পাঠিয়ে দেয়। পাশাপাশি সেলিম রুপালীকে হুমকি দেয় যদি তাকে বিয়ে না করে তাহলে নিজের কাছে থাকা ভিডিওগুলো ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে।
এসব বিষয় নিয়ে রুপালী পরবর্তীকালে তার বাবা আব্দুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সেলিমকে শায়েস্তা করতে পরিকল্পনা করতে থাকেন তারা। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়েতে রাজি হওয়ার নামে সেলিমকে খুন করার জন্য পূর্বপরিচিত খুনির সঙ্গে সলাপরামর্শ করে।
পরবর্তীকালে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রুপালী তার এক বান্ধবীর বাড়িতে অবস্থান নেয়। এরপর পালিয়ে বিয়ে করবে বলে সেলিমকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে কৌশলে দুপচাঁচিয়ার বড়কোল ও বেরুঞ্জ গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে নিয়ে যায়। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে রুপালীর বাবা ও তার তিনজন সহযোগী সেলিমের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তার মুখ ও মাথায় স্কচটেপ পেঁচিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। সবশেষে লাশ যেন কেউ চিনতে না পারে সেজন্য সেলিমের ব্যবহৃত মুঠোফোনসহ অন্যান্য পরিধেয় জিনিসপত্র তার বুকের ওপর রেখে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহের লক্ষ্যে সেখানে ৬টি কনডম ফেলে রেখে যায় আসামিরা।
এ ব্যাপারে বগুড়া ডিবি পুলিশের ওসি আছলাম আলী জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের শনিবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তারা ৩৬৪ ধরায় আদালতে জবানবন্দি দেয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের বেড়ুঞ্জ গ্রাম থেকে সেলিমের গলা কাটা ও অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় সেলিমের বাবা কফির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। লাশ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন হলো।