নিজস্ব প্রতিবেদক
দুহাত ছাড়াই যখন বিউটির জন্ম হয়, মা-বাবার প্রধান দুশ্চিন্তা ছিল, মেয়েটা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবে তো? পারবে তো এই কঠিন সমাজ বাস্তবতায় টিকে থাকতে? তবে যত দিন যাচ্ছে মা-বাবার কপালে থাকা সেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে, আর ঠোঁটে ফুটে উঠছে হাসি। বিউটি নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম দিয়ে তাঁদের বোঝা না হয়ে ক্রমেই হয়ে উঠছেন গর্বের কারণ।
অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে বিউটি পা দিয়ে লিখে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অর্জন করেছেন সাফল্য। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বিউটি। জিপিএ-৪.৬৭ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। এর আগে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
বিউটি এখন চান উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে, আত্মনির্ভরশীল হতে।
বিউটি আক্তারের জন্ম ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তাঁর বাবা বায়োজিদ ও মা রহিমা বেগম। বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। বিউটির বড় ভাই বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করেছেন। তবে এখনো চাকরি পাননি। অভাবের সংসার হওয়ায় ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার জন্য ওই দম্পতি অনেক কষ্ট সয়েছেন।
বায়োজিদ হোসেন বলেন, মেয়ে যখন দুটি হাত ছাড়াই জন্ম নিল, তখন সত্যিকার অর্থে তাঁদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। বিউটি লেখাপড়া করতে পারবে, এটা তাঁদের ভাবনাতেই ছিল না। শুধু চিন্তা হতো, মেয়েটা একা একা তাঁর প্রয়োজনীয় কাজ সামলাতে পারবে তো?
মা রহিমা বেগম বলেন, বিউটির পড়া বিষয়ে কোনো চিন্তা ছিল না। কারণ, পড়তে পারলেও লেখাটাই ছিল বিউটির জন্য প্রধান সমস্যা।
রহিমা বেগম বলেন, প্রথম দিকে তিনি মেয়েকে পা দিয়ে লেখা শেখানোর চেষ্টা করতেন। ঘরের মেঝেতে বসিয়ে তাঁর ডান পায়ের আঙুলের ফাঁকে পেনসিল অথবা কলম ধরিয়ে দিতেন। শুরুর দিকে বিউটির খুব সমস্যা হতো। তবে প্রতিনিয়ত বিউটি চেষ্টা চালিয়ে যান। একপর্যায়ে পা দিয়ে লেখা আয়ত্তে আনেন। রহিমা আরও বলেন, বিউটির অদম্য মনোবলই তাঁকে এত দূর নিয়ে এসেছে। যতই কষ্ট হোক, তাঁকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলবেন।
দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সামছুল হক বলেন, ‘মেয়েটি মেধাবী। নিয়মিত ক্লাস করত। পা দিয়ে লিখলেও তার ইংরেজি ও বাংলা দুটি লেখাই ভালো।’ অধ্যক্ষের ধারণা, পা দিয়ে লেখার জন্য খুব দ্রুত লিখতে একটু সমস্যার কারণে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেননি বিউটি।
ক্ষেতলালের আকলাস শিবপুর শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকাম উদ্দীন বলেন, বিউটি আক্তার পা দিয়ে লিখে তাঁর বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পান।
বিউটি আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক শাখায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চান তিনি। তাঁর পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও খুশি হবেন। ভবিষ্যতে তিনি শিক্ষক হতে চান। তিনি বলেন, লেখাপড়ার পেছনে তাঁর মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা তাঁর জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।