করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ ৬টি সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র প্রার্থীদের উদ্যোগে এসব সমাবেশ হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগের দাবিতে এই কর্মসূচি শুরু হবে চট্টগ্রাম থেকে।
আগামী ৪ মার্চের আগেই এসব বিভাগে সমাবেশ হবে। মঙ্গলবার রাতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া ধানের শীষের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগীয় শহরে মোট ৬টি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে। এসব সমাবেশে ৬ মেয়র প্রার্থীই উপস্থিত থাকবেন। দুই-একদিনের মধ্যে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সমাবেশের তারিখ ঘোষণা দেবে।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া ধানের শীষের প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ভোট ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ভোট বলতে কিছু নেই। দল হিসাবে আমাদের দায়িত্ব মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম, ভোটের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত করব। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে আমরা উদ্বুদ্ধ করার জন্য সমাবেশগুলো করতে চাচ্ছি। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সংবিধানে যে অধিকারগুলো দেওয়া আছে সেভাবেই সমাবেশ করব।
জানা যায়, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৬ সিটি করপোরেশনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা দলীয় মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠকে করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের তাবিথ আউয়াল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনা সিটি করপোরেশনের নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মজিবুর রহমান সারোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বৈঠকে ছিলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপিতে বৈঠকে যুক্ত হন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে মেয়র প্রার্থীদের অভিজ্ঞতার কথা শোনেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির’ কথা জানান তারা। পরে প্রার্থীদের উদ্যোগে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সমাবেশ শুরু হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আন্দোলনে দেশের মানুষ সাড়া দেবে। কারণ নির্বাচনি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করেছে সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন। বরিশাল সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এলাকায় প্রথম কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য সিটিতে কর্মসূচি পালন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রার্থী যুগান্তরকে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন বিএনপির লক্ষ্য। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতাসহ বেশ কিছু ইস্যু সমাবেশে তুলে ধরা হবে। জনগণকে আবারও স্মরণ করাতে চান, বর্তমান অযোগ্য নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ। তারা নির্বাচনকে একটি তামাশায় পরিণত করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি সমাবেশেই ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ ৬টি সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে যারা দলীয় মেয়র প্রার্থী ছিলেন তারা উপস্থিত থাকবেন। এমনও হতে পারে সমাবেশে যাকে প্রধান অতিথি (বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতাকে) করা হবে তিনিসহ শুধু মেয়র প্রার্থীরাই মঞ্চে বক্তব্য দেবেন। তারা নির্বাচনে যত অনিয়ম দেখেছেন তা তুলে ধরবেন।