আন্তর্জাতিক ডেস্কঃপাকিস্তানে কি ফের সেনাঅভ্যুত্থানের গুটি সাজানো হচ্ছিল? সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তিন জেনারেল-সহ ৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ অফিসারকে বরখাস্ত করার খবরে এই জল্পনা চরমে উঠেছে। প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ চালাচালি করেছেন তারা। যদিও সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কারণেই যে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এমন খবর নিশ্চিত করা যায়নি। অন্যদিকে পাকিস্তানও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ? পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সেনার ওই পদস্থ অফিসাররা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রচুর মেসেজ আদানপ্রদান করেছেন বলে অভিযোগ। এরপরেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল্লাহ ডোগার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইজাজ চৌধুরি এবং জেনারেল বিলাল আকবর-সহ বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোট ৬০ জন সেনা অফিসারকে বরখাস্ত করে পাকিস্তান আর্মি। তারপর থেকেই নানা মহলে জোর জল্পনা যে, স্মার্টফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার প্রাথমিক কারণ হলেও মূল কারণ সেনা বিদ্রোহের পরিকল্পনা হতে পারে।
তবে সরকারিভাবে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখনও কেউ মুখ খোলেনি। আবার বড় কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও এই খবর নেই। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমেও এই ধরনের কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি। তবে পাকিস্তানে ইমরান খানের কর্তৃত্ব কমা এবং সরকারে সেনার আধিপত্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত একাধিক খবরের ভিত্তিতে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ‘সিন্ধুদেশ’ নামে একটি টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য হওয়ার অভিযোগে ওই তিন জেনারেল-সহ ৬০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে সেনা বিদ্রোহের পরিকল্পনার জন্যই যে ওই সেনা অফিসারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এমন খবর নিশ্চিত করে বলা হয়নি ওই টুইটার হ্যান্ডলেও।
অন্য একটি সম্ভাবনাও অবশ্য উঠে এসেছে। গত বছরের নভেম্বরেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে কামার বাজওয়ার মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়েছেন ইমরান খান। সেই সিদ্ধান্তের জেরে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধানের পদে থাকবেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে পাক সেনার অভ্যন্তরের একাংশে ক্ষোভ-অসন্তোষ জমেছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে ওই অংশে কামার বাজওয়ার প্রতি আনুগত্যও কমার পাশাপাশি, তার বিরুদ্ধাচারণের পরিকল্পনাও চলছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ওই গোষ্ঠীকে ছেঁটে ফেলতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আবার এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তান আর্মির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে অন্য কোনও গোষ্ঠীও বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে বলে জল্পনা-গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের ৭২ বছরের ইতিহাসে সেনা অভ্যুত্থানের নজির রয়েছে একাধিক বার। কখনও তা সফল হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন সেনাবাহিনী। উদাহরণ পারভেজ মুশাররফ। কখনও আবার কড়া হাতে দমন করা হয়েছে। আবার সম্প্রতি একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে যে ইমরান খান সরকারে আধিপত্য বাড়ছে পাকিস্তান আর্মির। দেশে অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, বেহাল অর্থনীতির মতো একাধিক ইস্যুতে ‘কাপ্তান’ ইমরানের জনপ্রিয়তা ও কর্তৃত্ব দু’টোই কমছে বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর সেই সুযোগে ইমরানের উপর চাপ বাড়ছে সেনাবাহিনীর। সরকারের অভ্যন্তরে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী। কূটনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশ মনে করেন, সরকারে শীর্ষ পদে এভাবে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হলে সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই সব প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দিলেও সেনা অফিসারদের বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।