অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বন্ধুর বাসায় মৃত্যু হওয়া ঢাকার কলাবাগান এলাকায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টারমাইন্ডের ‘ও’ লেভেল পর্যায়ের শিক্ষার্থী আনুশকাহ নূর আমিনের মা-বাবা অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিড়ম্বনায় ফেলেছে। আমাদের মেয়ের জন্ম ২০০৩ সালে। পাসপোর্ট ও জন্মসনদ অনুযায়ী মেয়ের বয়স ১৭ বছর। মামলা দুর্বল করতে বয়স ১৯ লেখা হয়েছে। হয়তো আসামিপক্ষ পুলিশকে ব্যবহার করে এমনটি করেছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ি গোপালপুর গোরস্তানে আনুশকাহকে দাফন করা হয়। দাফন শেষে এলাকাবাসী দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
আনুশকাহর বাবা অভিযোগ করে বলেন, থানা পুলিশকে চারজনকেই আসামি করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মামলা দুর্বল হয়ে যাবে- এমন কথা বলে পুলিশ একজনকে আসামি করে। পুলিশ কেন এমন করল, তা বুঝতে পারছি না। চার বন্ধুকেই আইনের আওতায় নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কিশোরীর বাবা আরও বলেন, ঘটনার দিন তার মেয়ে দুপুর ১২টা ১৯ মিনিটের দিকে তাকে ফোন দিয়েছিল। প্রচণ্ড ব্যস্ততার কারণে তিনি ফোন ধরেননি। পরে দুপুর দেড়টার পর তার মা ফোন করে জানায় মেয়ে মারা গেছে। হাসপাতালে লাশ পড়ে আছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কিশোরীর মা বলেন, সকালে তিনি সিটি করপোরেশন কর্মস্থলে চলে যান। তার বাবাও কারখানায় চলে যান। বেলা ১১টায় মেয়ে ফোন করে জানায়, পড়াশোনার পেপারস নিতে বাসার বাইরে যাবে। এরপর দুপুর ১২টার দিকে সে বাইরে যায়।
দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে মেয়ের ফোন থেকে দিহান পরিচয় দিয়ে এক ছেলে ফোন করে জানায় আনুশকাহ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এমন কথা শোনার পর দ্রুত তার (মেয়ের) এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান।
দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে রিসিপশনে চারজন ছেলেকে বসে থাকতে দেখেন। এ সময় এক ছেলে দিহান পরিচয় দিয়ে বলে মেয়েটি তাদের বাসায় ছিল। সাথে তারা চার ছেলে বন্ধু ছিল। এমন কথা শোনার পর বাকি তিনজনকে জিজ্ঞেস করলে তারাও বাসায় থাকার কথা স্বীকার করে। তারা বলে- ওই সময় বাসায় আর কেউ ছিল না।
এ সময় মেয়ের কী হয়েছে আমার বুঝতে বাকি ছিল না। পরে মেয়েকে দ্রুত দেখতে যাই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ মেয়েকে দেড় ঘণ্টা দেখতে দেয়নি। দেড় ঘণ্টা পর তার বান্ধবী মেয়ের হাত ও কোমরে কালচে দাগ দেখেন এবং ওই সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
দিহান সম্পর্কে কিশোরীর মা বলেন, ওই ছেলেকে আগে কখনো তিনি দেখেননি। মেয়েও তাকে কোনোদিন কিছু বলেনি। জানতে পেরেছেন দিহান অন্য স্কুলে এ লেভেলের ছাত্র। সে কখনোই তার বন্ধু হতে পারে না। হয়তো ফেসবুকে যোগাযোগ করে কৌশলে তাকে (মেয়ে) বাসায় নিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে মেয়েকে নিয়ে হত্যা করেছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও চার বন্ধুর কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।