পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী জনশুমারি এবং অর্থনৈতিক শুমারির পাশাপাশি কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি পরিচালনা করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই দেশে পঞ্চমবারের মতো কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি ২০১৮ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়।
‘কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৮’ প্রকল্প মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের আগেই কাগজ-কলম-ফাইল কেনা হয়। তবে মাঠ পর্যায়ের কাজ দেরিতে বাস্তবায়নের কারণে স্টোরে পড়ে থেকে ১৩ কোটি টাকার কাগজ-কলম নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বিষয়টি নিয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জানিয়েছেন, জনশুমারি প্রকল্পে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। কেননা কৃষি শুমারিতে কাগজ-কলম ব্যবহার করতে গিয়ে ১৩ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। অনেক কাগজ নষ্ট হয়েছে, তথ্য ধরা যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে অনেক দেনদরবার করে এই টাকা পাস করাতে হয়েছে।
বিবিএস সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৪৫ কোটি ৩৯ হাজার টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের মে থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু প্রকল্পটির ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৮৪ কোটি ১০ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এর মধ্যে কাগজ-কলম-ফাইল স্টোরে নষ্ট হয়ে ১৩ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৭৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রকল্পের মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে মেয়াদ আরো ২ বছর বাড়ানোসহ কতিপয় খাতের ব্যয় সমন্বয় করা হচ্ছে। ফলে তা সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন বরাবর প্রস্তাব করেছে বিবিএস।
প্রকল্পটি আবারও সংশোধনের প্রস্তাবের যুক্তি তুলে ধরে বিবিএস জানায়, কৃষি শুমারির জন্য মূল তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিস্তারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে নমুনা শুমারি পরিচলনা করা সম্ভব হয়নি। নমুনা শুমারির মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শেষে রিপোর্ট প্রণয়ন এবং উক্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পরে ইন্টিলিজেন্ট ক্যারেক্টার রিকগনাইশন (আইসিআর) প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়োজিত আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান পুরো কাজ শেষ করে ডাটাবেজ বিবিএসের কাছে হস্তান্তর করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, মুদ্রণ ও বাঁধাই, জরিপ, কর্মকর্তাদের জন্য সম্মানী ভাতা, কর্মকর্তাদের যাতায়াত ভাতা, মোটরযান সংগ্রহ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি মেরামত ও সংরক্ষণ এসব কাজের ব্যয় কমবে। জরিপ কাজে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী, পরিতোষিক ব্যয়, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণ ব্যয়, বেতন ভাতা, মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ ইত্যাদির ব্যয়, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ৩৪৫ কোটি টাকা থেকে এখন প্রকল্পের ব্যয় ৩৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রশিক্ষণ খাতে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে ১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব বাদ দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি পরিচালনার মাধ্যমে কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির ব্যবহার, শস্যের ধরণ, জমি চাষের প্রকার, চাষ পদ্ধতি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির সংখ্যা, মত্স্য চাষের বিভিন্ন তথ্যাদি এবং এ সব কার্যক্রমে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। এ ধরনের তথ্য কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যাবেক্ষণে বেঞ্চমার্ক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ৬টি প্রধান ফসল এবং ১১৮টি অপ্রধান ফসলের আয়তন, ফলন ও উৎপাদনের হিসাব প্রাক্কলন করে থাকে। বিবিএস বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহযোগিতায় সারা দেশে শহর ও গ্রামে কৃষি শুমারি পরিচালনা করে আসছে। কৃষিশুমারি পরিচালনার মাধ্যমে কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির ব্যবহার, কৃষির প্রকার, শস্যের ধরণ, চাষ পদ্ধতি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর সংখ্যা এবং কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যাবেক্ষণে বেঞ্চমার্ক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১৯৬০, ১৯৭৭, ১৯৮৩-৮৪, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোট চার বার দেশে কৃষি শুমারি পরিচালনা করা হয়েছে। পঞ্চম শুমারি দেশব্যাপি পরিচালিত একটি অন্যতম বৃহৎ শুমারি কার্যক্রম। প্রতি দশ বছর অন্তর কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়।