চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃশুধু সরকারি অফিসই নয়, প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই দুর্নীতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিকশিত হোক শত ভাবনা’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।সোমবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-এ ফাউন্ডেশনের পরিচালক (সমন্বয়) সুরাইয়া রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সক্রিয় সদস্যদের মুক্ত চিন্তা, সুস্থ মানসিক গঠন ও মননশীলতা তৈরির লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন প্রতি মাসে এ ধরনের মুক্ত আলোচনা করে আসছে। এটি ছিল এর ৯৩তম পর্ব।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়ে কথা আসলেই সাধারণ মানুষ প্রথমেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সরকারি অফিস। কারণ ওই যে, সরকারি অফিসে যাওয়া লাগে। বিদ্যুৎ অফিসে গেলে পায়সা ছাড়া কিছু করাই যায় না। ট্যাক্স দিতে কাস্টমসে টাকা দিতে হয়, পুলিশে তো কথাই নাই! আর দুই তিনটা জায়গার কথা উচ্চারণ করতে মানা। সমস্যা হয়ে যাবে। পরবর্তী দিন কী হয়ে যাবে, এর কোনো উপায় নেই। এসব জায়গার কথা বলা যাবে না।তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু এর চেয়ে আরও বেশি দেখি, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে দুর্নীতি রয়েছে। আমি যদি কস্টমসে আমাদের অফিসারদের বলি যেখানে যে ডিউটি আছে ঠিকমত নিবা। মালামাল আমদানির ক্ষেত্রে ঠিকমত ডিক্লেরেশন দেয়া আছে কিনা দেখবা, মাল কতটুকু এনেছে সেটা দেখবা। দেখা গেলো যে, আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে এই রকম হয় যে সে কাগজে বলবে ৫ টন মাল আমদানি করছি। কিন্তু আসলে আনবে ৭০ টন। ৫০ টনে শুল্ক দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে চাইবে ৭০ টন। তারপর বলবে যে, গামছা আনছি। কিন্তু আনবে স্যুটের কাপড়। কমদামি কাপড় আনার ঘোষণা দিয়ে আনবে দামি দামি কাপড়। তিনি বলেন, ‘রফতানির জন্য যেসব কাপড় আনা হয় সেসব কাপড়ে ডিউটি ফ্রি সুযোগ দেয়া আছে। তারা ডিউটি ফ্রি কাপড় আমদানি করে গার্মেন্টসে পোশাক তৈরি করে রফতানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনবে। সে কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা সরকারকে দিয়ে দেবে না। এ জন্য সরকার তাকে সমান টাকা দিয়ে দেবে। লাভটা সেই ভোগ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ সুযোগ নিয়ে ডিউটি ফ্রি কাপড় এনে সে পোশাক তৈরি করে রফতানি না করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়। সরকারকে প্রায় ৫০ শতাংশ ট্যাক্স না দিয়ে এনে এটা দেশেই বিক্রি করে দেয়। এতে অনেক লাভ। কারণ সে ট্যাক্স বাবদই ৫০ শতাংশ ছাড় পেয়েছে। এসবের জন্য ইসলামপুর, নয়াবাজার, তাঁতীবাজার এ রকম কত বাজার গড়ে উঠেছে শুধু মাত্র এ ধরনের বন্ডের কাপড় দিয়ে। শুধু ঢাকায় না, চট্টগ্রাম, খুলনা সব জায়গায়।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এক ধরনের ব্যবসায়ীরা কম দামে নিম্নমানের বিদেশি কাগজ এনে দেশের বাজার নষ্ট করে দিচ্ছে। এতে করে দেশের কাগজ মিলগুলো লোকশানে পড়ছে।তিনি বলেন, এটা একটা উদাহরণ দিলাম। সাধারণ মানুষ যে বলে সরকারি চাকরিজীবীরা ঘুষ খায়, ওমুকে খায়, তমুকে খায়। সুবিধা যদি পায় কোন মানুষটা খায় না’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, মানুষ সরকারকে ঠকাতে তৎপর। ৭০-৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে অথচ আয়কর দেয় না। বলে আমার তো বাড়িই নেই। আবার অনেকে বাড়ি আছে তারপরও টিআইএন সার্টিফিকেট নেই। কেউ কর দিতে রাজি নয়। আমাদের দেশে কার দেয়ার সামর্থ রাখে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। অথচ আয়কর রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষ।
তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমি আশাহত হতে চাই না। উন্নত হতে হতে এমন একটা জায়গায় যাবো যেখানে গিয়ে আর কেউ খারাপ থাকতে পারবে না। এর জন্য হয়তো সময় লাগবে। তবে আমাদের এখন থেকেই ভালো হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। উন্নতির পাশাপশি নীতি-নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আর পরিবর্তন একদিন আসবেই।’
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এত কিছুর পরও ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সালে আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে চার গুণ। আগামী ২০৩০ সালে এটা আরও চারগুণ বাড়বে। আমাদের অর্থনীতি এতটাই উন্নত হয়েছে যে, এখন সামান্য ব্যবহৃত একটা ভালো কাপড়ও কাউতে দিতে ভয় পাই। কারণ সে বলবে আমাকে পুরোনোটা দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে কোয়ান্টাম ফউন্ডেশনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা অন্যরকম হয়। কারণ এখানে ধ্যান, জ্ঞানের পাশাপশি নীতি-নৈতিকতাও শেখানো হয়। পরোপকারে উৎসাহিত করা হয়। একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে রক্ত দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তুলতে তারা এগিয়ে আসে। যা খুব বেশি প্রশংসার দাবিদার।