মর্জিনা খাতুনের (২৫) স্বামী ভূমিহীন পাপ্পু চায়ের দোকানের শ্রমিক। তাদের রয়েছে চার বছরের ছেলে মাহিন। ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রিত থেকে তাদের অনেক বঞ্চনা সইতে হয়েছে দীর্ঘদিন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পেতে যাচ্ছেন সেমিপাকা ঘর। মর্জিনার চোখেমুখে হাসির ঝলক। তিনি বললেন, ‘আমরা ভূমিহীন গরিব মানুষ। আমরা কি কোনদিন কামাই রোজগার কইরা বাড়িঘর করবার পাইতাম। কোনো দিন আশাও করি নাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে একটা বিল্ডিংঘর দিতাছেন। প্রধানমন্ত্রী এই গরিবের দিকে তাকাইছেন। আল্লায় তারে সুস্থ রাখুক। তিনি যেন মেলা দিন বাঁইচা থাকেন। গরিব মাইনসের যাতে মেলা উপুকার করবার পারেন।’
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় প্রধানন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর বরাদ্দ পেয়ে জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের পারপাড়া গ্রামের ভূমিহীন মর্জিনা খাতুন এভাবেই তার অনুভূতি প্রকাশ করেন। একই গ্রামের অটোভ্যানচালক ভূমিহীন ইসরাফিলের স্ত্রী মনিরা খাতুন, ভূমিহীন মিতু, স্বামী পরিত্যক্তা মিনা খাতুনসহ ঘর বরাদ্দ পাওয়া স্থানীয় আটটি গৃহহীন অসহায় পরিবারের সবাই অনেক খুশি। পারপাড়া গ্রামে নির্মাণ করা হচ্ছে আটটি সেমিপাকা ঘর। নির্মাণ কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। দিনের বেলা ঘরনির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় বরাদ্দ পাওয়া ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা এসে তীর্থের কাকের মত বসে থাকেন প্রকল্প এলাকায়। তাদের চোখেমুখে একটাই স্বপ্ন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নতুন ঘরের মালিক হতে যাচ্ছেন। শুরু করতে যাচ্ছেন শান্তিতে বসবাসের নতুন জীবন।
সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে ৪০০টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই শতাংশ খাস জমির ওপর ১৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা করে। প্রতিটি ঘরে রান্নাঘর, টয়লেট ও অন্যান্য সুবিধা থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও গৃহনির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগেই সদরের সবগুলো ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে সদরের গৃহনির্মাণ কমিটির সভাপতি ইউএনও ফরিদা ইয়াছমিনের ব্যস্ত সময় কাটছে। এই ঘর নির্মাণ সরাসরি তদারকি করতে তিনি প্রতিদিনই কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে নির্মাণ কাজ পরিদর্শন ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক সদরের কেন্দুয়া ইউনিয়নে নির্মাণাধীন ঘর পরিদর্শন ও ঘর বরাদ্দ পাওয়া অসহায় পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিয়েছেন।
একই প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার ৪০০ ঘরসহ জেলার সাতটি উপজেলায় এরকম মোট এক হাজার ৪৭৮টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মেলান্দহে ২৬০টি, ইসলামপুরে ৮৮টি, মাদারগঞ্জে ১২১টি, বকশীগঞ্জে ১৪২টি, সরিষাবাড়ীতে ২৯৫ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ১৭২টি ঘর নির্মাণ কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও গৃহনির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালোমতো ঘরনির্মাণ কাজ শেষ করে অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে ঘর বুঝিয়ে দিতে পারি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প উদ্বোধনের আগেই সদরের ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাদের ভূমি নেই, তাদের জন্য এই ঘরের ব্যবস্থা করেছেন। জামালপুর জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৮টি ঘর নির্মাণ কাজ খুব দ্রতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ঘর নির্মাণ কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ঘরের নির্মাণকাজের গুণগতমান যাতে বজায় থাকে এর জন্য আমি নিজে এবং ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই সার্বক্ষণিক পরিদর্শন ও নজরদারি করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা ঘর পাচ্ছেন তাদের অনেকেই অনেক পেশার সাথে যুক্ত আছেন। কিন্তু তাদের ভূমি ছিল না। ঘর ছিল না। তারা অসহায়ভাবে জীবন যাপন করতেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে।’