চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃশুরুতেই হোঁচট খেয়েছে সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহে শুরু হওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল দখল উচ্ছেদ অভিযান। গত ২৩ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর উপজেলার চুঙ্গারবিল-কপোতাক্ষ খাল উচ্ছেদে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। অস্থায়ী ৬টি দোকান ভাঙার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কার্যক্রম।
জানা যায়, ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খালে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও দরপত্র আহ্বান না হওয়া ও অর্থ না থাকা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। পরবর্তীতে কবে কার্যক্রম শুরু হবে তারও কোনো হদিস নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে জেলায় মোট খাল রয়েছে ১১৫টি এবং বিল ২টি যার দৈর্ঘ্য ৪৫৩ কিলোমিটার। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২০ ভাগ খাল পুরোপুরি অস্তিত্ব হারিয়েছে। বাকি খালগুলোও দখলদার কবলে পড়ে মৃত প্রায়। বাদ যায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডে জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) সেচ প্রকল্পের খাল।
জেলার শৈলকূপা, হরিণাকুন্ডু, কোটচাঁদপুর, মহেশপুরসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা খালের চারপাশে ইচ্ছামতো তৈরি করা হচ্ছে দোকানপাট-ঘরবাড়ি। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললেও তা দখলমুক্ত করতে দেখা মেলেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা জেলা প্রশাসনের কোনো কার্যক্রমের। অথচ এই খালগুলোই পানি নিষ্কাশন, মাছের অভয়াশ্রম কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে যুগের পর যুগ।
স্থানীয়রা জানান, ইচ্ছামতো মানুষ খালগুলো দখল করে নিচ্ছে। যে যার মতো প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর তৈরি করছে। প্রশাসন যদি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ এ কাজগুলো অধিকাংশই করে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধররা। তাই সরকার যদি এ দিকে নজর দেয়, খালগুলো দখলমুক্ত করে তবেই আগের অবস্থা ফিরে আসবে।
ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রহমত আলী জানান, খাল-বিল দখল হয়ে যাওয়ায় সেখানে কমেছে মাছের প্রজাতি। পাশাপাশি বিভিন্ন জলজ প্রাণীও ধ্বংস হচ্ছে। এতে করে খাদ্য শৃঙ্খলের ওপর একটা বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানবজাতির ওপর। কেননা খাদ্য শৃঙ্খলে একে অপরের সাথে জড়িত, এর একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যটির ওপরেও প্রভাব পড়ে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জানান, সচিব মহোদয়ের নির্দেশে আমরা শুরুর জন্য শুরু করেছি। দরপত্র আহ্বান না হওয়ায় এবং অর্থ না থাকায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে দরপত্র আহ্বান সম্পন্ন হলে এবং অর্থ পেলে পুনরায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হবে। এছাড়াও ডেল্টা প্লানের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলার দখল হওয়া প্রায় ৬৭টি খাল পুনঃখনন করা হবে। সাথে সাথে জিকে সেচ প্রকল্পের খালও খনন করা হবে।
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ব্যক্তি স্বার্থে যারা খাল দখল করছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এসব খাল উচ্ছেদ করা হবে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।