বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ঘুর্ণিঝড় রেমালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবন পানির প্লাবনে মৎস্য ও কৃষি খাতে এবং ঘুর্ণিঝড়ে প্রাণী সম্পদ খাতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।
ফকিরহাট কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে উপজেলার আট ইউনিয়নের ২৬৯৪.৬৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা। এসব ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের মধ্যে রোপা আউশ বীজতলা, সবজি, মরিচ, পেঁপে, কলা, আম, পান, আদা সহ মৌসূমী ফসল রয়েছে। কৃষকদের সবজি ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এছাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে নদী উপকূলবর্তী এলাকার কৃষির ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পাগলা শ্যামনগর গ্রামে কৃষক আবুল কালামের ৪০ শতক জমির বেগুন, লাউ, ঝিঙে, মিষ্টি কুমড়া, করলা ও ডাটা সহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে। আটকে থাকা পানি নিঃস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল। এতে তার প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সবজি ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কলা চাষিদের বিভিন্ন বাগানের ফলবান কলাগাছ ভেঙে এলোমেলে অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক পানের বরজ ঝড়ের তাণ্ডবে মাটিতে মিশে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ শাখাওয়াত হোসেন জানান, উপজেলার ১হাজার ৪২০ জন কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পেয়েছি। কৃষকের জমিতে থাকা পানি নিঃস্কাশনের ব্যবস্থা করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জ্যোতি কনা দাস জানান, ফকিরহাটের মূলঘর ও নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে ১০৭টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ৯৬জন চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মৎস্য বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য নিরূপণে কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
তবে মাঠ পর্যায়ে চাষীদের দাবী তলিয়ে যাওয়া ঘেরের পরিমান অনেক বেশি। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করেন চাষিরা।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান জানান, ঘুর্ণিঝর রেমালের তাণ্ডবে অনেক মুরগী ও গরু খামারের টিনের চালা উড়ে গেছে। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাঈদা দিলরুবা সুলতানা জানান, প্রাথমিকভাবে উপজেলার বেশ কিছু কাঁচা ও আধাপাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। মূলঘরের কলকলিয়া, গুড়গুড়িয়া সহ কয়েক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। ঘুর্ণিঝড় রেমালে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ মাঠ পর্যায়ের ক্ষতির তথ্য পাঠালে তা একত্র করে উপজেলার প্রকৃত চিত্র জানা যাবে।