চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যাসহ ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি।ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটিতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয়ে মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পুনরায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত এক পথসভায় মিলিত হয়। পথসভাটিতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। পথসভায় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতকালের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- বাংলাদেশের স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে এটা হতে পারে না। জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাহলে ভারত থেকে কি কি নিয়ে আসলেন?
রিজভী বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ছিল- ‘ভারতকে সারাজীবন মনে রাখার মতো’। আপনার দেওয়া ট্রানজিট, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, সাত রাজ্যের নিরাপত্তা, নদী-সমুদ্র, বন্দর, সুন্দরবন, প্রতিরক্ষা, বৃহত্তম রেমিটেন্স, অবাধ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে আপনি প্রতিবারের মতো এবারও হয়ত খালি হাতে ফিরবেন না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বললেন, আপনি দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেন না। তাহলে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর কেন দিয়ে আসলেন? গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তো আপনি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না। এতে গোটা জাতি হতভম্ব হয়ে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন করতে না পারায় সরকার প্রধানের সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, অন্যান্য বারের মতো এবারও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো চুক্তি হবে না। আপনি তিস্তার পানি চাইতেই পারলেন না, উল্টো ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসলেন! এখন দাতা হাতেমতাই হয়ে আপনি বলছেন, ‘কেউ পানি চাইলে, তা যদি না দেই, সেটা কেমন দেখায়?’
এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুর বিষয়টি টেনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনি ভারতকে চাপ দিতে পারেননি। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের বদলে দিয়ে এসেছেন ফেনী নদীর পানি এবং গ্যাস। এছাড়া জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) বিষয়ে টু শব্দটিও করেননি। যৌথ বিবৃতির কোথাও এটির উল্লেখ নেই। আর এ দিকে, বাংলাদেশের মানুষ সেটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতির মতো ইস্যুগুলো অ্যাজেন্ডার কোথাও স্থান পায়নি। যা বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে আরও যোগ করেন তিনি।
ভারতের রাডার স্থাপনে অনুমতি দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে রিজভী আরও বলেন, ভারতকে আমাদের উপকূলে নজরদারির জন্য ২০টি রাডার স্থাপনে অনুমতি দেওয়া হলো। এতে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংঘাতের বলি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পথসভায় খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল এবং সেই ক্ষমতাবলে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতেই ‘গণতন্ত্রের মা’, দেশের গণমানুষের আস্থাভাজন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১০ মাস আগেই মিথ্যা এবং সাজানো মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রেখেছে সরকার।
রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ প্রবল শক্তি নিয়ে রাস্তায় নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিরপরাধ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জাতীয়তাবাদী শক্তি এখন আরও বেশী ঐক্যবদ্ধ।
সবশেষে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করে বলেন, আমি আবারও অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তিসহ দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, সাইফুর রহমান মিহির, কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউর রহমান ফাহিম, দপ্তর সম্পাদক এ বি এম এ রাজ্জাক, বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন ভুইয়া প্রমুখ।