চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ফুলবাড়ীগেট-তেলিগাতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং এবং খোয়া উঠে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়ে কুয়েটসহ বিভাগীয় ছয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম জনদুর্ভোগে পড়েছে। সড়কটির তিন/চারটি স্থানে রাস্তা জুড়ে গর্তে পরিনত হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যস্ততম সড়কটির খানা-খন্দে পড়ে প্রতিদিন ইজিবাইকসহ ছোট যানগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভাগীয় সরকারি বহু প্রতিষ্ঠানের একমাত্র যোগাযোগের এই সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত বেহাল অবস্থা স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে, কেডিএ কর্তৃপক্ষ জমি অধিক গ্রহণের মাধ্যমে ১৯৮৭/৮৮ সালে সড়ক নির্মাণ করে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে গত ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে এলজিডির তত্ত্বাবধানে সড়কটির কুয়েট মেইনগেট থেকে তেলিগাতি পাকার মাথা পর্যন্ত পুনঃনির্মাণ কাজ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, পুনঃনির্মাণ কাজ করার সময় রাস্তা খুড়ে রাস্তার সলিংয়ের ইট তুলে ধুলাবালু দিয়ে ভরাট করে নামমাত্র মেরামত করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সলিংয়ে বিছানো পুরাতন ইট ভেঙে রাস্তায় কাজে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়রা সড়কটির পুনঃনির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার ও কার্পেটিংয়ে সঠিক মাত্রার বিটুমিন না দেওয়ায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক ও এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলবাড়ীগেট থেকে তেলিগাতী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানের কার্পের্টিং এবং খোয়া উঠে শত শত খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। কুয়েট মেইনগেট, খানাবাড়ী নারিকেল তলা, ল্যাবরেটরী স্কুল মোড় এবং পাকার মাথায় চারটি স্থানের প্রায় রাস্তার জুড়ে কার্পেটিং এবং খোয়া উঠে বড়বড় গর্তে পরিনত হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে রাবিশ ফেলায় ছোট যানবাহনগুলো কোন রকম চলাচল করছে। কুয়েট দিবস উপলক্ষে গত দুই আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খোয়া বালু এবং এলজিডি’র জনবল দিয়ে কোন রকম ফুলবাড়ীগেট প্রধান সড়ক থেকে কুয়েট মেইনগেট পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী করেছে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় শিক্ষক দিলীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, শিক্ষাজোন খ্যাত এ এলাকাটি পরিচিত। খুলনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে ফুলবাড়ীগেট প্রধান সড়ক থেকে কুয়েট মেইনগেট পর্যন্ত। এই সড়কের দুরাবস্থার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। শুধুমাত্র রাস্তার জন্য অনেক শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে যায়। অনেক শিশু শিক্ষার্থীকে ভ্যান অথবা ইজিবাইক থেকে পড়ে যেতে হচ্ছে। ইজিবাইক চালক মোঃ বাবু জানান, সড়কের বিভিন্ন স্থানে শত শত গর্ত হওয়ায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। খানা-খন্দের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিদিন ৫/৭টি ইজিবাইক নষ্ট হচ্ছে।
ভ্যান চালক বাবুল শিকদার জানান দুইদিন আগে তার ভ্যানটির চাকা গর্তে পড়ে এক্সসেল ভেঙে যাওয়ায় তার রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে আবার রাস্তার এই অবস্থার জন্য গাড়ি চলানো বন্ধ করে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, সড়কটির পুনঃনির্মাণ কাজে চরম অনিয়ম দুনীতি এবং অব্যবস্থার মধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষ আজ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কয়েকটি স্থান বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এলজিইডি এবং সিটি কর্পোরেশনের কাঁদা ছোড়াছুটিতে রাস্তাটির কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, খুূলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (কুয়েট), নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গভ. ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, খানাবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খানজাহান আলী বিএম কলেজ ও তেলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ খানাবাড়ী, তেলিগাতী এবং রংপুর অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। বর্তমানে বাইপাস সড়কের লিং রোর্ড হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ সড়কটি। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সময়ে সংষ্কারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠিন এগিয়ে আসবে এমনটি আশা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী।