চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্থানের আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বিমা খাতে যোগদানের দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস সারাবাংলাকে জানান, রাজনীতির বাইরে এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম ও শেষ চাকরি। চিফ এজেন্ট হিসাবে তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করাকালীন সময়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অফিস করতেন। পরবর্তীতে তিনি এই কোম্পানিতে গাজী গোলাম মোস্তফা, চট্রগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী ও ঢাকার মোহাম্মদ হানিফকেও যোগদান করান।
তিনি আরও জানান, ১৯৬০ সালের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চিফ এজেন্ট হিসেবে যোগদেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য এটা ছিল রাজনীতির বাইরে প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। আর সেটা হলো বিমা খাত। তাই এই দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১ মার্চকে বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করতে একটি প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রস্তাবটি যাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবস হিসাবে কার্যকর হবে, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১ মার্চকে ‘ক’ ক্যাটাগরিভুক্ত দিবস হিসাবে ঘোষণা করতে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
গকুল চাঁদ দাস বলেন, ‘১৯৫৮ সাল থেকে আইযুব খানের মার্শাল ল’ জারি হওয়ার কারণে তখন দেশে রাজনীতি বন্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু আপাতমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। তার পক্ষে রাজনীতি না করে থাকা সম্ভব ছিল না। এই অবস্থায় তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্সে জয়েন করে চাকরির আবরণে রাজনীতি করতেন।’
‘গাজী গোলাম মোস্তফা, জহুর আহমেদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ হানিফকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু চট্রগ্রাম, খুলনা, সিলেট যেতেন। সেখানে বিমা কোম্পানির কাজে গেলেও তিনি লোকজনের সঙ্গে দেখা করে নানা ধরনের রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা দিতেন।’
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, পৃথিবীর অনেক দেশেই বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য একটি দিন, সপ্তাহ অথবা মাসকে বিমা সেবা দিবস, সপ্তাহ বা মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পালন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো বিমা দিবস না থাকলেও বিমা নীতি ২০১৪তে বিমা দিবস রাখার বিষয়টি স্থান পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এই ধরনের কোনো দিবস নেই। ফলে ২০১১ সাল থেকে একটি দিনকে বিমা দিবস হিসাবে পালন করার জন্য কাজ করছিল বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
কোন দিনটি এবং কী কারণে ওই দিনটিকে বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল আইডিআরএ। তবে প্রথম থেকেই আইডিআরএ বঙ্গবন্ধুর বিমা খাতে যোগদানের তারিখটিকে বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিমা কোম্পানিতে যোগদানের সঠিক দিনটি বের করতে না পারায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মাঝখাতে ২৬ জানুয়ারি আইডিআরএ যাত্রা শুরুর দিনটিকে বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্ট ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, যে ১৯৬০ সালেরর ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। তাই এখন এই দিনটিকে জাতীয় বিমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।
আগামী বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী। এই দিনটি পালন করতে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. খলিলুল রহমাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বছরব্যাপী পালন করার জন্য বিমা কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্যও ইতিমধ্যে আইডিআরএ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী পালনের কথা বলা হয়েছে। যাতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী যথাযথভাবে পালন করা যায়।
উল্লেখ্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালেরর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘাতকদের হাতে তিনি নিহত হন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী।