জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র জমি নিজেদের দাবি করে দখলের চেষ্টা চালিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শত শত এলাকাবাসীর বাধার মুখে ওই স্কুলের পুরাতন ভবন ভাঙতে না পেরে অনেকটা গায়ের জোরেই সেখানে মাটি ভরাট শুরু করেছে নাসিক কর্তৃপক্ষ। স্কুলের মালিকানার প্রমাণ দিতে ৭ কার্যদিবসের সময় বেঁধে দেয়ার চিঠি দিলেও তার আগেই জমি দখলের প্রক্রিয়া চালিয়েছে নাসিক।
গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পাইকপাড়ায় ‘১৬ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের ওপর চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
যদিও রহস্যজনক কারণে দখলে যাওয়ার ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু জানান, দখল প্রক্রিয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধুর নামে করা স্কুলের জমি কোনোভাবেই নিতে দেয়া হবে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্য প্রাইমারি স্কুল (টেকিং ওভার অর্ডিন্যান্স ১৭৭৩) অধ্যাদেশের বলে যে বিদ্যালয় যেই অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় অধিগ্রহণ করে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার ঘোষণা করেন।
১৯৭৪ সালে ওই আইন অনুযায়ী ১৪২ দাগের ১ একর ৩৩ শতাংশ জমি বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে অধিগ্রহণ করা হয়। এই পুরো জমির প্রকৃত মালিকানা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোছাম্মৎ হুমায়ারা জানান, গত ২০ ডিসেম্বর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নাসিকের ২ জন লোক এসে আমাদের দিয়ে গেছেন।
সেখানে বলা হয়েছে- স্কুলের পুরো জায়গার মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং স্কুলের অভ্যন্তরে থাকা ২০ শতাংশ জমি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তাদের প্রয়োজন। স্কুলের মালিকানা সংক্রান্ত দলিলাদি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তার দপ্তরে দাখিল করতেও বলা হয়।
সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি পেয়ে তিনি বিষয়টি সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। কিন্তু কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই গত মঙ্গলবার সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে স্কুলের পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে ফেলতে শুরু করেন। এ সময় এলাকাবাসী ও স্কুলের শিক্ষকরা বাধা দিলে তারা থেমে যান।
প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ২ অথবা ৩ জানুয়ারি স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আমি তখন স্কুলের একটি একতলা ভবন জরাজীর্ণ বলে মেয়রকে জানাই। গত ২০ জানুয়ারি চিঠি পাওয়ার পর একজন আইনজীবীর মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের উল্লেখ করা জমির যে দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেয়া হয়েছে- ওই সব পর্চা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিষয়টি জানিয়ে গত মঙ্গলবার স্কুলের পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদনও নাসিক মেয়র বরাবর দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা।
এ ব্যাপারে ওই ওয়ার্ডের (১৭নং) কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবু বলেন, প্রয়োজনে কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করে জীবন গেলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে করা ওই স্কুলের জমি নিতে দিব না।
তিনি বলেন, স্কুলের পাশেই শিশু নিকেতন নামে একটি বেসরকারি স্কুল রয়েছে। ওই স্কুলের খেলার মাঠ নেই। ওই স্কুলটিকে সুবিধা দিতেই সিটি করপোরেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি খেলার মাঠের জন্য ব্যবহার করতে চাইছে।
এদিকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামাল দেওয়ান এ ব্যাপারে অসংলগ্ন তথ্য দিয়েছেন। সিটি করপোরেশন থেকে দেয়া চিঠিতে স্কুলের পুরো জমি সিটি করপোরেশনের দাবি করলেও তিনি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, নাসিক যেখানে মাটি ফেলছে সেটা কবরস্থানের জায়গা। স্কুলের মোট ভূমির পরিমাণ কতটুকু সেটি তিনি বলতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিন্দ্র কুমার মণ্ডল বলেন, আমরা বিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে অগ্রসর হব। আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলো সংশ্নিষ্টদের কাছে জমা দেব।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটি আমারই স্বাক্ষরিত। তবে গতকাল (মঙ্গলবার) যে তারা উচ্ছেদে গেছে, সেটি আমার জানা নেই। আমি সারাদিন বাইরে ছিলাম।
তিনি দাবি করেন, স্কুলের পুরো জমিটি পর্চায় সাবেক নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নামেই রয়েছে।