বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে তফসীল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর। চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, সংরক্ষিত সদস্যা প্রার্থীরা বর্তমানে নির্বাচনী মাঠকে সরগরম করে রেখেছেন।
এরই মধ্যে উপজেলার অন্য ৬টি ইউনিয়নে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ও গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত ইউনিয়ন নির্বাচন চলাকালে এ ইউনিয়নের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচনী হাওয়া পুরোদমে বইতে শুরু করেছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ও সমর্থন চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটিয়ে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন।
জলমা ইউনিয়নে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন উপজেলা, ইউনিয়নের বিভিন্ন পদাসীন আওয়ামী নেতৃবৃন্দ। যেখানে সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক ইউপি সদস্যসহ ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী কিছু নেতৃবৃন্দ।
দলের তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড, চায়ের দোকান থেকে রাজপথ এবং ভোটারদের দোরগোড়ায় ছুটছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশীরা। কে ইউনিয়নে নৌকা পাচ্ছেন বা কে পাচ্ছেন না এসব অংকের হিসাব-নিকাশ হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে, মোড়ে, ষ্ট্যান্ড ও আড্ডাসহ সর্বত্র।
বিগত সময় নেতৃত্বদানকারী নেতাদের কি ব্যর্থতা, কি সফলতা তার চুলচেড়া হিসাব-নিকাশ চলছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও সর্বসাধারণের মধ্যে। তাদের দাবী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল, স্বজনপ্রীতি, অনিয়মের আশ্রয় না নিয়ে, তৃণমূল কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও সাধারণ জনগণের সাথে দুর্ব্যবহারকারী নেতাদের বাদ রেখে দলের দুর্দিনে পাশে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীদের ভিতর থেকে যোগ্য প্রার্থীর কাছে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হোক।
এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই উপজেলার জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। আর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ও সমর্থনের আশায় মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা।
ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে যারা লড়তে ইচ্ছুক তারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এদিকে মাঠে নেই বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপির নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে সাড়া পাবার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কেন্দ্রের সাড়া পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
সে দিক থেকে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান আশিকের নাম শোনা যাচ্ছে জোরে-সোরে।
এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান এলাহীর নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে ইসলামী আন্দলন বাংলাদেশে থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী থাকবে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে রয়েছে ৮ গ্রাম বিশিষ্ট (অষ্টবামের) কৃতিসন্তান তরুণ সমাজ সেবক উদীয়মান নেতা সুমন রায়।
অন্যদিকে সদ্য আ’লীগে যোগদানকারী বারবার নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আঃ গফুর মোল্লা আ’লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলে সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
জনশ্রুতি রয়েছে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আশিক এর নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আঃ গফুর মোল্যাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাবে।
অন্য আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত ইউপি নির্বাচনে এ ইউনিয়নের স্থানীয় বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী আশিকুজ্জামান আশিকের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে আশিককে জিতিয়ে ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান আশিককে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। সে লক্ষে জলমা ইউনিয়ন আ’লীগ ও ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মন্তব্য।
ইতিমধ্যে উক্ত নীল নকশার আংশিক বাস্তবায়নে জলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থী ও মনোনয়নের সুপারিশ করতে উক্ত ওয়ার্ডে মিটিং করেছে বলে জানা গেছে।
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে মতে ইউপি নির্বাচনে অংগ্রহণকারী সম্ভাব্য নৌকা প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যচ্ছে, বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনুপ গোলদার, আওয়ামী লীগে যোগদানকারী বারবার নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আঃ গফুর মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসলাম তালুকদার, জলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিধান চন্দ্র রায়, উপজেলা যুবলীগ সদস্য রথীন্দ্রনাথ রায়।
এ ব্যাপারে উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের নেতা সুমন রায় এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার স্থায়ী বাড়ি জলমা ইউনিয়নের অষ্টবাম (আট গ্রামের) চরা এলাকায়। আমার আট গ্রামের পূর্ব পুরুষরা স্বাধীনতার পর থেকে চেয়েছে এ অঞ্চলে একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করে চেয়ারম্যান পদে বসাবে। কিন্তু আট গ্রামের সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। এবার আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে পূর্ব পুরুষদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ারও সুযোগ এসেছে। আশাকরি এবার আমাকে সে সুযোগ দেবে আমার এলাকার সাধারণ মানুষ।
১০ নভেম্বরের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। ২৯ নভেম্বর সোমবার যাচাই-বাছাই। ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়ের করা যাবে আপিল। ৩ থেকে ৫ নভেম্বর এর মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি হবে। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৭ ডিসেম্বর দেয়া হবে প্রতিক বরাদ্দ। ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।