বটিয়াঘাটা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নারায়ন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে গতকাল বুধবার বিআরডিবির খুলনার উপপরিচালক তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। এসময় সমবায়ীরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ মৌখিক এবং লিখিত ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ফলে অভিযোগের প্রাথমিত সত্যতা মিলেছে। তবে তদন্তকালে বিতর্কিত অফিসারের পাশে জনৈক ব্যক্তিকে বারবার শলাপরামর্শ করতে দেখে সমবায়ীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে সমবায়ীরা “ দালাল হতে সাবধান” সম্বলিত শ্লোগান লিখে বিভিন্নস্থানে লিফলেট লটকান।
সূত্রে প্রকাশ, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ০৬/০১/২০২১ তারিখে ৪৭.৬২.০০০০.২০৪.০০.০৩৪.১৭.১৪৮ নম্বর স্মারকে উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বটিয়াঘাটা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নারায়ন চন্দ্র সরকারকে বদলি করেন । কিন্তু তিনি সেই আদেশ বাস্তবায়ন না করে তদবীর করে বদলি স্থগিত করেন। বদলী স্থগিত হলেও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড’র উপপরিচালক (প্রশাসন) কর্তৃক স্বাক্ষরিত ৪৭.৬২.০০০০.২০৪.০০.৮৮০.১৭.৩৬৬ নম্বর স্মারকে অপর এক আদেশে নারায়ন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে কর্মচারী ও সমবায়ীদের সাথে দুর্ব্যবহার,্ঋন বিতরণ ও আদায়ে অনিহা, নিয়মিত মাঠ পরিদর্শনে না যাওয়া এবং নারী কেলেংকারীসহ নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে মর্মে অভিযোগ সমূহ সরেজমিনে তদন্তপূর্বক পত্র প্রাপ্তির ১০(দশ) কর্মদিবসের মধ্যে যুগ্মপরিচালক (প্রশাসন) বরাবর মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পত্র প্রাপ্তির পর উপপরিচালক খুলনা ৪৭.৬২.৪৭০০.৮৫৪.২৭.১২৫.১৭.৫৩ নম্বর স্মারকে বুধবার ৩ ফেব্রুয়ারী তদন্ত করতে সরজমিনে আসেন। তদন্তকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সমবায়ীগণ উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসারের বিরুদ্ধে সমবায়ীদের সাখে ক্ষমতার দাম্ভিকতা, অনিয়ম, ঋণ বিতরণকালে হয়রানি, খেলাপি ঋন উত্তোলনে অনিহা, নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন না করাসহ একাধিক অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। সমবায়ীরা মৌখিক ও লিখিত ভাবে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। গরিয়ারডাঙ্গা কৃষক সমবায় সমিতির ম্যানেজার জগত আলী মোড়ল বলেন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নারায়ন চন্দ্র সরকার যোগদানের পর থেকে এমন আচারণ ও হয়রানি করে যাতে সমবায়ীরা অতিষ্ঠ্য হয়ে উঠেছে। তিতুখালী সমিতির ম্যানেজার বিমান কৃষ্ঞ বিশ্বাস বলেন, পল্লী উন্নয়ন অফিসার আমার সমিতিতে কোনদিন যায়নি, তিনি সমবায়ীদের হয়রানি করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সমবায়ী পরিতোষ দেওয়ান, স্বপন ফৌজদার, প্রমিলা মন্ডল, সঞ্চিতা বিশ্বাস, সবিতা ঢালী, মহিত্রা মল্লিক, জুলফিক্কার আলী, সুনীল বৈরাগী, মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান সরদার, রমেশ সরকার, দীপক সরকার, গৌরপদ মন্ডল, কৃষ্ঞপদ মন্ডল, মোঃ গোলাম মল্লিক, উজ্জল সরকার, প্রসেনজিৎ মন্ডলসহ অসংখ্য সমবায়ীরা নারায়ন সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। বটিয়াঘাটা ইউসিসিএ লিঃ এর ভাইস-চেয়ারম্যান বিউটি পাল বলেন, বর্তমান পল্লী উন্নয়ন অফিসার সমবায়ীদের সাথে যে হয়রানিমূলক আচারণ করছেন তা দুঃখজনক। এটার প্রতিকার হওয়া জরুরী। তাছাড়া একজন অফিসার যদি ভালো হবেন,তাহলে বদলী ঠেকালেন কেন ?
বটিয়াঘাটা ইউসিসিএ লিঃ এর চেয়ারম্যান এসএম ফরিদ রানা বলেন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নারায়ন চন্দ্র সরকার যোগদানের পর থেকে সমবায়ীরা বিভিন্ন অভিযোগের কথা বলে আসছেন। তিনি সমবায়ীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, দাম্ভিকত্,া হয়রানি করছে,যা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তিনি ঋণ বিতরণে অনিহা ও উত্তোলনে অনিহা, নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করেন না। যার ফলশ্রুতিতে খেলাপি ঋণ উত্তোলনে খুলনা জেলার মধ্যে বটিয়াঘাটা সর্বনিম্ম। আরও নানান অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চয় নেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এব্যাপারে খুলনার উপপরিচালক একেএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি বটিয়াঘাটা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সরজমিনে পরিদর্শন সম্পন্ন করেছি। অভিযোগকারীদে অভিযোগ শুনেছি ও লিখিত বক্তব্য সংগ্রহ করেছি। উক্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরী করে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড সদর দপ্তরে প্রেরণ করা হবে।
এদিকে তদন্তকালে বিতর্কিত অফিসারের পাশে জনৈক ব্যক্তিকে বারবার শলাপরামর্শ ও দৌড়ঝাপ করতে দেখে সমবায়ীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে সমবায়ীরা “ দালাল হতে সাবধান” সম্বলিত শ্লোগান লিখে বিভিন্নস্থানে লিফলেট লটকান।