বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ৮ম শ্রেনীতে অধ্যায়নত এক ছাত্রীর জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে ভিডিও শেয়ারিং এ্যাপ টিকটকে ছড়িয়ে দিয়েছে তার সহপাঠি নাঈম। ছাত্রী অভিভাকদের অভিযোগ, এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। বিচারে সহযোগীতা না পাওয়ায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে ওই ছাত্রী ও তার মা রুমা বেগম। তবে পাথরঘাটার পুলিশ বলছে ভুক্তভোগী পরিবার তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন।
বখাটে নাঈম উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাজির খাল গ্রামের সৌদি প্রবাসী সগির খানের ছেলে ও আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অস্টম শ্রেনীর ছাত্র। সগীর খানের স্ত্রী ছেলে নাঈমকে নিয়ে পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাঈম বখাটে এবং উশৃংখল প্রকৃতির ছেলে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ইভটিজিংসহ মারামারি অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে পাথরঘাটা কেএম মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই বহিস্কারের পরে তিনি আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ওই স্কুলছাত্রী জানান, একই স্কুলের সহপাঠি নাঈম দির্ঘদিন ধরে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পথে ঘাটে উত্যক্ত করত নাঈম। এরই জেরধরে গত বুধবার স্কুল ছুটির পর ক্লাস থেকে বের হওয়ার আগেই নাইম ওই ছাত্রীর স্কুলব্যাগ নিয়ে বাহিরে বের হয়। ওই ছাত্রী ব্যাগের জন্য নাইমের কাছে গেলে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। এই দৃশ্য পাশ থেকে একই ক্লাসের সবুজ নামের অন্য এক ছাত্র গোপনে তা ভিডিও ধারন করেন। যা পরবর্তীতে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় নাঈম। তিনি আরো জানান, বিষয়টি লজ্জায় কাউকে জানাইনি। কিন্তু গকতাল শুক্রবার আমার এক প্রতিবেশী ভিডিওটি আমাকে দেখালে বিষয়টি আমার মাকে জানাই।
স্কুলছাত্রীর মা রুমা বেগম জানান, নাঈম তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করে আসছে। এ নিয়ে এক বছর আগে নাঈমের মামা ইউসুফ এর কাছে বিচার দিলেও কোন সমাধান পাইনি। এরপরে গত দুদিন আগে আমার মেয়েকে নিয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ভিডিওটি দেখার পর আমার মেয়েকে মারধরও করি। এরপর বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে তিনি বিচার করবেন বলে আমাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। প্রধান শিক্ষক নাঈমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যার্থ হওয়ার পরে গতকাল শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে পাথরঘাটা থানার গিয়ে বিষয়টি ওসি আবুল বাশারকে জানাই এবং মামলা করার কথা বলি। কিন্তু ওসি দীর্ঘক্ষণ আমাদের বসিয়ে রেখে তা একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পরে আসতে বলে আমি ও আমার মেয়েকে পাঠিয়ে দেন।
ওই ছাত্রীর মা আরো জানান, আমার মেয়ের সম্মান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বখাটে নাঈম ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি এই বিষয়টি নিয়ে থানায় গিয়েও যদি আইনের আশ্রায় নিতে না পারি তাহলে আমি যাব কোথায়? সমাজে মুখ দেখানোর উপায় নেই। এখন আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ নেই।
আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, স্কুল ছুটির পরে স্কুল গেটের বাইরে এ ধরনের একটি অপ্রিতিকর ঘটনা কথা শুনেছি। এই বিষয়ে নাইনের পরিবারকে অবহিত করলে তারা নাইমকে হাজির করতে পারেনি। সে কারণে আমরা বিষয়টি নিয়ে সমাধানে যেতে পারেনি।
এ ব্যাপারে নাঈমের মায়ের মুঠোফোন জানান, এবিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। আপনার কিছু জানার থাকলে সামনে এসে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন। কিছুক্ষন পরে আবার ফোন দিয়ে বলে বিষয়টি পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষন সমাধান করে দিবেন। তাছারা আমার ছেলেকে বিভিন্ন লোকে ফোনে হুমদি দেয়ার পরে খুজে পাচ্ছিনা। আমার ছেলের সন্ধান চাই।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার সাংবাদিকদের জানান, রাতে স্কুলছাত্রী ও তার মা থানায় এসে বিষয়টি জানিয়ে গেছেন। তারা মামলা করার জন্য আসেন নি বরং মৌখিক অভিযোগ করতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।