বরিশাল জেলার গৌরনদীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আড়াই মাস পরে বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলমারিতে পাওয়া গেল ব্যালট পেপার ও দুইশ’ ব্যালটের মুড়ি বই। এ নিয়ে শুরু হয়েছে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়।উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ খান বলেন, দীর্ঘ দিন পর রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে স্কুলে পাঠদান শুরু করা হয়। দুপুরে বিশেষ প্রয়োজনে কাগজপত্র খুঁজতে গিয়ে বিদ্যালয়ের স্টিলের আলমারি খোলা হয়। এ সময় আলমারির ভেতরে ইউপি নির্বাচনের কিছু ব্যালট পেপার ও দুইশ’ ব্যালটের মুড়ি পাওয়া যায়।
আবদুল লতিফ খান বলেন, গত ২১ জুন বার্থী ইউপি নির্বাচনে এই স্কুলটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাকে নির্বাচনের আগের দিন আলমারির চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করে চাবি হস্তান্তর করে চলে যান। কিন্তু করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এতদিন আলমারি খোলার প্রয়োজন পড়েনি। স্কুল খোলার পরে এসব ব্যালট ও ব্যালটের মুড়ি পাওয়া গেছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানানো হয়েছে।
বার্থী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী খায়রুল আহসান অভিযোগ করে বলেন, বিগত নির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতি করে আমাকে পরাজিত করার অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তা আমলেই নেয়নি। এখন স্কুলের আলমারি থেকে ব্যালট পেপার ও পেপারের মুড়ি বই পাওয়ায় নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কার হলো।
তিনি অভিযোগে আরও বলেন, ইউনিয়নে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং অফিসার ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই দুইশ’ ব্যালটের ভোট কারচুপি করে গোপনে বাক্সে ঢুকিয়ে আমার প্রতিপক্ষ সোবাহান হাওলাদারকে বিজয়ী করা হয়।
পরাজিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী শিপ্রা রানী অভিযোগ করে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহানাজ বেগমকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন তিনি।
একই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আলমারিতে পাওয়া ব্যালট ও মুড়ির সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।
রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।এ ঘটনায় ইউএনও বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ব্যালট ও দুইশ’ ব্যালটের মুড়ি বই পাওয়ার বিষয়টি আমাকে অবহিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র: প্রথম আলো