চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাগেরহাট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্রে করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপিতে চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবারও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ায় বিভক্ত জেলা বিএনপি’র দু’গগ্র“পের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। এ অবস্থায় গতকাল রবিবার বিকেলে নতুন এ কমিটিকে প্রত্যাখান ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সদ্য বিদায়ী জেলা বিএনপি’র সভাপতি এমএ সালামের অনুসারিরা শহরের সরুইস্থ জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এ সময় তারা ৭২ ঘন্টার মধ্যে নতুন কমিটির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, গত ২১ ডিসেম্বর বিএনপি নেতা এটিএম আকরাম হোসেন তালিমকে আহ্বায়ক ও মোজাফফর রহমান আলমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যের একটি কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নেতারা। নতুন এই কমিটিতে সদ্য বিদায়ী জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালামকে এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়েছে। এছাড়াও তার অনুসারিদের অনেককেই সদস্য পদে রাখা হয়েছে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। তিনি গত ২১ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র এই আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন।নতুন আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম-আহবায়ক হয়েছেন কামরুল ইসলাম গোরা, শমসের আলী মোহন, খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ ও ড. ফরিদুল ইসলাম। এছাড়া সদস্যরা হলেন, এম এ সালাম, আলী রেজা বাবু, মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন, এড. আসাদুজ্জামান, মনিরুল ইসলাম খান, কাজী খায়রুজ্জামান, প্রকৌশলী মাসুদ রানা, ডাঃ আব্দুর রহমান, মোঃ মনিরুল হক ফরাজি, নাসির আহমেদ মালেক, ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, শেখ সাহেদ আলী রবি, অধ্যাপক হাদিউজ্জামান হিরো, সরদার ওয়াহিদুল ইসলাম পল্টু, আলহাজ্ব জুলফিকার আলী, শেখ আব্দুল হালিম খোকন, মেহেবুবুল হক কিশোর, বেগম রুনা গাজী, এড. মিজানুর রহমান, এড. ফারহানা জাহান নিপা, হাজরা আসাদুল ইসলাম পান্না, শেখ সফিকুর রহমান, শেখ হাফিজুর রহমান, মমিনুল হক টুলু বিশ্বাস, মোঃ শহিদুল হক, আঃ মজিদ জব্বার, মোল্লা ইসহাক আলী, হাফিজুর রহমান তুহিন ও মৃধা নজরুল ইসলাম। নতুন এ কমিটি ঘোষণার ফলে ২০১৭ সালে গঠিত জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবুর কমিটি বিলুপ্ত হলো। নতুন এই কমিটির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম সালাম বিরোধী। তিনি এক সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর সদস্য সচিব মোজাফ্ফর রহমান আলম জেলা বিএনপি’র সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এম এ সালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
অপর দিকে, কেন্দ্র ঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এতে বাগেরহাটে বিএনপি’র চলমান রাজনীতিতে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতা বলেন, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে এম এ সালাম দলের হাল ধরেন। সেই থেকে তিনি দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তিনি দলের হাল ধরায় বিএনপি’র এক সময়ের ত্যাগী অনেক নেতা-কর্মীই তা মেনে নিতে পারেননি। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করার মধ্যে দিয়ে বিএনপি’র দু’টি পক্ষ প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকে সালাম বিরোধীরা বিএনপি’র রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালামকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে কেন্দ্র প্রথমে জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিমকে মনোনয়ন দেয়। পরে কেন্দ্র দুইপক্ষকে ডেকে সমঝোতার ভিত্তিতে সালামকে চূড়ান্ত প্রার্থী করে। নির্বাচনের পর তাদের মধ্যে আবারও শুরু হয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ। জেলা যুবদলের কমিটি গঠনের পর থেকে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন শুরু করে। শনিবার জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে কেন্দ্র নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেয়ায় বিরোধ আরও চাঙ্গা হলো বলে মনে করেন ওই নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, দুর্দিনে দলের হাল ধরেছিলাম। বিভিন্ন সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনে এই নেতারা কোথায় ছিলেন। যাকে দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে তিনি এক সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেক নেতা নিষ্ক্রীয় ও প্রবাসী। বিগত দিনে কেন্দ্র কোন কর্মসূচি দিলে সে সময়ে তাদের কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি। যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের অনেকেই এলাকায়ও থাকেন না। এই কমিটির অনেকেই অন্তত ২০ বছর আগে দল ত্যাগ করেছেন। আবার মৃত ব্যক্তিকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী এই কমিটিকে মেনে নিতে পারছেন না। তারা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে কেন্দ্র এই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি না দিলে বাগেরহাট জেলায় কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন এই বিদায়ী সভাপতি।
সালামের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে নতুন কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, শহিদ জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপিকে বাগেরহাটে কুক্ষিগত রেখেছিলেন আগের সভাপতি এম এ সালাম। এই কমিটির মধ্যে দিয়ে বিএনপি তার ভারমুক্ত হলো। সালামের স্বেচ্ছাচারিতার কারনে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তার কারনে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন দলের অধিকাংশ ত্যাগী নেতা-কর্মী। তার মতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে গেলে তিনি নেতা-কর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করতেন। তার অনুগতদের নিয়ে পকেট কমিটি করেছেন তারও অসংখ্য তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে। দলের দলবিমুখ নেতা-কর্মীরা নতুন এই কমিটি পেয়ে দারুণ খুশি। নতুন এই কমিটি আগামীতে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করবে বলে মনে করেন এই নেতা।