খুলনা জিরোপয়েন্টের সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে এসে অবৈধ গর্ভপাত করেন তমা বেগম। নবজাতক কন্যা শিশুটি মাত্র ১৫ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি করছিলেন তিনি। ঠিক সেই মুহুর্তেই র্যাবের অভিযান। এ ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় খুলনার জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন রংধনু আবাসিক এলাকায় মায়ের আর্শীবাদ নামের তিনতলা ভবনের সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বেবী মন্ডলের মালিকাধীন লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মেয়াদুত্তীর্ণ ওষুধও জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব-৬ এর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গালিব পাশার নেতৃত্বে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযানে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাবরিয়া রহমান স্নিগ্ধাও ছিলেন। এই ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। দীর্ঘদিন যাবত সাইন বোর্ডে খুলনার স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নাম ব্যবহার করে ক্লিনিকটিতে অপারেশন করছেন বেবী মন্ডলের স্বামী পি কে মন্ডল। তারও চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর কোন সনদ নেই বলে জানিয়েছে র্যাব-৬।
জেলা সিভিল সার্জন ও র্যাব-৬ সূত্রে জানা গেছে, দু’দিন আগে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে সোহবান হোসেনের স্ত্রী তমা বেগম (২৫) সুন্দরবন ক্লিনিকে ভর্তি হন তার পিতা সোহরাব হাওলাদারের মাধ্যমে। এলাকায় বলে এসেছে টিউমার অপারেশন করতে খুলনায় এসেছেন তারা। পূর্বে দু’টি সন্তান থাকায় স্বামীর অনুপস্থিতিতে জন্ম নেয়া অবৈধ এ সন্তানটি জন্মের পর সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঝাড়ুদার রেহেনা ও তার বোন হোসনেয়ারার মাধ্যমে বিক্রির জন্য খরিদ্দার খুঁজতে থাকে তমা বেগম।
আর এ কাজে সার্বিক সহায়তা করেন ক্লিনিক মালিক বেবী মন্ডল ও তার স্বামী চিকিৎসক পরিচয়দানকারী পি.কে মন্ডল। আজ সন্ধ্যায় ১৫ হাজার টাকা মুল্যে নবজাতক কন্যা সন্তানটি কিনতে যান সাচিবুনিয়া এলাকার চা বিক্রেতা মজলু ও লাজলী দম্পত্তি। গোপন খবরের ভিত্তিতে এসময়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গালিব পাশার নেতৃত্বে অভিযান চালায় র্যাব-৬। সাথে ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাবরিনা রহমান স্নিগ্ধা।
তিনি বলেন, সুন্দরবন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোন অনুমোদন (লাইসেন্স) নেই। তারা ২০১২ সাল থেকে ক্লিনিকটি পরিচালনা করছে। ক্লিনিকটিতে অন্তত ২৪জন স্বনামধন্য চিকিৎসকের নাম সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা হয়েছে, যারা কেউ এখানে রোগী দেখেন না। চিকিৎসাশাস্ত্রের বৈধ ডিগ্রি না থাকা স্বত্তেও পি.কে মন্ডল নামের এই ব্যক্তি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতেন, শুধু তাই নয়- তিনি মেজর অপারেশনও করতেন।
ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে কয়েকজন নারী ও শিশু মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অস্বাস্থ্যকর জিঞ্জির পরিবেশের এ ক্লিনিকটিতে কোন নার্স, ওয়ার্ডবয় বা টেকনিক্যাল হ্যান্ডস্ নেই। এমনকি অন্য কোন চিকিৎসকও আসতেন না এখানে। তাই দ্রুত ক্লিনিক খালি করার নির্দেশ দিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানে মেয়াদুত্তীর্ণ ওষুধ, অবৈধ নবজাতক বিক্রির স্ট্যাম্প ও অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশকিছু সরমঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া নবজাতক বিকিকিনির সাথে জড়িত মজনু, লাজলী, তমা বেগমের পিতা সোহরাব হাওলাদারকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, অবৈধ ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগে বেবী মন্ডল ও তার স্বামী টিকে মন্ডলকেও আটক করা হয় এবং ক্লিনিকটি সিলগালা করেন ভ্রাম্মমান মেজিস্ট্রেট জানিয়েছে।