চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃভিয়েতনামের জাতীয় ফল ড্রাগন। মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগনে স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং প্রসাধনী গুণ থাকায় দিনদিন বাংলাদেশে এর চাহিদা বাড়ছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে দেশে। খুলনা জেলার মাটি ও আবহাওয়ায় বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে এ ভিনদেশী ক্যাকটাস প্রজাতীয় ফলের।
খুলনা শহর থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে প্রায় ১৪ কিলোমিটার গেলেই ডুমুরিয়া উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পথ গিয়ে শরাফপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে গেলেই চোখ পড়ে বিএম শাহিনুর রহমানের ড্রাগন বাগান। দুর থেকে দেখলে মনে হয় স্বযতেœ ক্যাকটাস লাগিয়েছে কেউ। একটু পাশে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে এক লাল ফলে। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। ২০১৫ সালে শাহিনুর রহমান এ বাগানের সুচনা করেন। মাত্র ১০টি চারা দিয়ে। যেখানে এখন পায় ১হাজার গাছ রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে গাছের চারা। সেই সাথে পতি সপ্তাহে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ২/৩ মণ। যা বাজারে পাইকারী কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে। আর প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। তার এই চারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশেও।
খুলনা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এটি লতানো কাটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোন পাতা নাই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন গাছে শুধুমাত্র রাতে স্বপরাগায়িত ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রং এর হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের খুঁটির সাথে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপনের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। এপ্রিল-মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১শ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
ড্রাগন চাষী বিএম শাহিনুর রহমান জানান, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১০টি চারা দিয়ে আমি ড্রাগন চাষাবাদ শুরু করি। গত বছর মাত্র ২১ শতাংশ জমিতে বিক্রি হয়েছিল দুই লক্ষাধীক টাকা। আর এ বছর ৫১ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের চাষাবাদ করেছি। এছাড়া ঘেরের আইলে যা লাগিয়েছিলাম তা ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও এ বছর আশা করছি ৫ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি হবে। খুলনা জেলায় ফলন ভাল হচ্ছে কিন্তু এ ফলের জনপ্রিয়তা এখনো তেমন বাড়েনি। মানুষের মধ্যে প্রচারণাও তেমন হয়নি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। প্রতিদিন এলাকার অনেক কৌতহলী মানুষ আসে দেখতে। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছে, চাষাবাদও করছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, ড্রাগন ফল বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং মাটি এটি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ডুমুরিয়াতে বাউ-১, বাউ-২ জাতের ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন গাছে একটানা ৬/৭ মাস ফল পাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য বেশি এবং অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় আমরা এটি সম্প্রসারণের কাজ করছি। ব্লুগোল্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এটি ডুমুরিয়াতে প্রথম বারের মতো চাষ শুরু হয়েছে। এটি অনেক লাভজনক হওয়ায় এটির আবাদ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তরুণ উদ্যেক্তরা এটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, জেলায় অনেকেই ড্রাগন ফলের চাষ করছে। বিদেশী এ ফসল দেশের মাটিতে চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ্য রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্থানীয় বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এ ফল চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে।