অনলাইন ডেস্কঃ বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। এমন অভিযোগ করে বিএনপি বলছে, পাবনায় শেখ হাসিনার ট্রেন বহরে হামলা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। খায়রুল হকের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন-একে একে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধানগুলোকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মারাত্মক প্রক্রিয়া তারা সম্পন্ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি বিচার ব্যবস্থাকে আজ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। ফলে জনগণের যে ন্যূনতম আস্থা সেই বিচার বিভাগের নিকট মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত রায়ে পরিষ্কারভাবে এই কথা বলেছেন যে, বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের শিকার হয়েছে এবং জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিম্ন আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ন্যায়বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি। বিচারপতি সিনহাকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ-দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। দেশনেত্রীর মামলায় এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতি সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতার ট্রেনের ওপর হামলা সংক্রান্ত মামলায় নিম্ন আদালতে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা বিচার ব্যবস্থায় একই চিত্র তুলে ধরেছে। এই মামলার রায়ে নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তি প্রদানের আদেশ সমগ্র জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, আমরা যেকোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আমরা সবসময়ই সন্ত্রাসের ঘটনায় নিন্দা করেছি, প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অথচ একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সব কর্মকর্তাকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বছর পর অভিযোগপত্র দিয়ে ২৫ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করেছে যে, এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, শুধু ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য একের পর এক গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে, বিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে চিরতরে নির্বাসিত করার আয়োজন সম্পন্ন করেছে আ’লীগ। জনগণের আশ্রয়ের শেষস্থল বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।