বাংলাদেশ থেকে বিমানপথে বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষা করাতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৫৪টি কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এসব কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়ে তবেই বিমানে ওঠা যাবে।
বিদেশগামীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৈরি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে সনদ ইস্যু করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফি দিতে হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা করাতে লাগবে ৩ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি) ডা. মারুফুর রহমান অপু ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের দেশের সরকারি ২০টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এবং বেসরকারি ৩৪টি কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে এসে সহজেই নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো যাবে।
তিনি জানান, এসব যাত্রীদের যাত্রা শুরুর ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে হয়। এ সময় সঙ্গে পাসপোর্ট ও টিকেটের অনুলিপিও দিতে হয়। এছাড়াও মূল পাসপোর্ট ও টিকেট দেখাতে হয়। নমুনা পরীক্ষা করে যাত্রার ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আটকা পড়েছেন অন্তত দেড় লাখ বাংলাদেশি। তাদের ফেরার ক্ষেত্রে ‘করোনাভাইরাসমুক্ত’ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করে দেয় বিভিন্ন দেশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক আপডেটে বলা হয়েছে, বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করবেন ০১৩১৩৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯, ০১৩১৩৭৯১১৪০ হটলাইন নাম্বারগুলোতে।
বিদেশগমনেচ্ছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ মুক্ত সনদ দেওয়ার জন্য আইইডিসিআর ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে করোনা পরীক্ষা করা যাবে, সেগুলো হলো-
সরকারি প্রতিষ্ঠান
১. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, আগারগাঁও ঢাকা।
২. এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর।
৩. সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা।
৪. আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী।
৫. সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট।
৬. নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল।
৭. বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম।
৮. রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।
৯. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
১০. কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ।
১১. রংপুর মেডিকেল কলেজ মেডিকেল কলেজ।
১২. ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।
১৩. খুলনা মেডিকেল কলেজ।
১৪. কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ।
১৫. শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।
১৬. ন্যাশনাল পোলিও মিজেলস ল্যাবরেটরি (এনপিএমএল)- আইপিএইচ, মহাখালী, ঢাকা।
১৭. রোগতত্ত্ব ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর মহাখালী, ঢাকা।
১৮. জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান-নিপসম, মহাখালী, ঢাকা।
১৯. শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।
২০. কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
১. আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী, ঢাকা।
২. ডিএমএফআর মলিকিউলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকস, সোবহানবাগ, ঢাকা।
৩. ল্যাব এইড লি. ধানমন্ডি, ঢাকা।
৪. ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
৫. আইদেশী, মহাখালী, ঢাকা।
৬. পপুলার ডায়াগনস্টিক, সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৭. স্কয়ার হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা।
৮. এভার কেয়ার হাসপাতাল, বসুন্ধরা, ঢাকা।
৯. প্রাভা ডায়াগনস্টিক, বনানী, ঢাকা।
১০. ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা।
১১. গুলশান ক্লিনিক, গুলশান, ঢাকা।
১২. স্টীমজ হেলথ কেয়ার বিডি লি, ১১৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা।
১৩. আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
১৪. নেভাস ক্লিনিক রিসার্চ সার্ভিসেস লি., ঢাকা।
১৫. ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ।
১৬. গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ।
১৭. আইচি হাসপাতাল।
১৮. টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড রায়াতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল।
১৯. মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মিরপুর, ঢাকা।
২০. অলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, ঢাকা।
২১. হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড।
২২. বসুন্ধরা মেডিকেল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা।
২৩. ডিএনএ সলিউশন লিমিটেড, ঢাকা।
২৪. বায়োমেড ডায়াগনস্টিকস, ঢাকা।
২৫. ডায়নামিক ল্যাব, ঢাকা।
২৬. বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেড।
২৭. সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার।
২৮. প্রাইম ডায়াগনস্টিক লিমিটেড।
২৯. প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, বাড্ডা।
৩০. বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সাইন্স জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
৩১. সিম্যান্তিক প্যাথলজি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
৩২. শেভরন ক্লিনিকাল ল্যাবরেটরি (পিটিই) লিমিটেড, চট্টগ্রাম।
৩৩. জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।
৩৪. এ এম জেড হাসপাতাল লি.।
বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
গত দুই মাস করোনা আক্রান্তের নিম্নমুখী ধারার পর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আজও (১১ মার্চ) হাজারের বেশি আক্রান্তের খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১০৫১ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকালও (বুধবার) ১ হাজার ১৮ জন আক্রান্তের তথ্য জানায়। এর আগে সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি একদিনে এক হাজার ৭১ জন আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট হাজার ৫০২ জনে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিন জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর ঠিক ১০ দিন পর দেশে ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যু হয়। প্রথম মৃত্যুর তিন দিন পর করোনায় দ্বিতীয় মৃত্যু হয় ২১ মার্চ। এরপর ২৩, ২৪ ও ২৫ মার্চ টানা তিন দিনে তিন জনের মৃত্যু হলেও মার্চ মাসে ভাইরাসটিতে আর কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
১ এপ্রিল মৃত্যু হয় আরেকজনের। মৃত্যুশূন্য থাকে ২ ও ৩ এপ্রিল। ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দেশে দুজনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে আর এমন কোনো দিন যায়নি, যেদিন করোনায় দেশে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ জনের নিচে থাকলেও, ১৬ এপ্রিল প্রথমবারের মতো করোনায় দুই সংখ্যার মৃত্যু দেখে বাংলাদেশ। ১৭ এপ্রিল ছাড়িয়ে যায় মানুষের কল্পনাকেও, ওই দিন দেশে করোনায় ১৫ জনের প্রাণহানি হয়।
এরপর ১০ মে ১৪ জনের মৃত্যুর পর ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত, মাঝের সময়ে করোনায় সিঙ্গেল ডিজিটের কোনো মৃত্যু হয়নি। ভাইরাসটিতে প্রথম ২০-এর অধিক মৃত্যু হয় ১৮ মে, সেদিন দেশে ২১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ৩১ মে প্রথমবারের মতো দেশে ৪০ জনের মৃত্যু হয় এ ভাইরাসে। ৫০ ছাড়ায় ১৬ মে, সেদিন মৃত্যু হয় ৫৩ জনের। ৩০ জুন দেশে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটে, সেদিন এ ভাইরাস প্রাণ কেড়ে নেয় ৬৪ জনের।
মূলত ২৯ মে থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু একদিনের জন্যও ২০ জনের নিচে নামেনি। প্রায় চার মাস ১০ দিন পর ৯ অক্টোবর করোনায় মৃত্যু ২০-এর নিচে নেমে আসে, সেদিন দেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।