পাকিস্তানি শাসকের শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল বাঙালির প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সার্বিক মুক্তির জন্য। তা করতে গিয়ে তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন, বারবার বেছে নিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ। নিজে যেমন আমৃত্যু মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, তেমনি তার কর্মি এবং আদর্শের অনুসারীদের সেই দীক্ষায় দীক্ষিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে এই প্রজন্মের যারা রাজনীতি করেন, তাদের একজন পরিচ্ছন্ন তরুণ রাজনীতিক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন।
অবৈধভাবে রাস্ট্রক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপি আন্দোলন সংগ্রাম যখন তুঙ্গে এমনি সময়ে ৮০’র দশকের শেষ ভাগে শেখ শহীদুল হক এবং রিজিয়া শহীদ দম্পতির কোল আলো করে ২৭ শে আগস্ট পৃথিবীতে আগমন ঘটে শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনের। পিতা শেখ শহীদুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ শহীদ ছিলেন ষাটের দশকের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা এবং সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জনপ্রিয় ভিপি। খুলনার সহস্র মানুষ যাকে এখনো স্মরণ করে, স্মৃতিচারণ করে তার সংগ্রামী জীবন আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তার নিঃস্বার্থ আনুগত্যের। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ অন্তঃপ্রাণ কর্মিদের প্রতি তার অকৃত্তিম দরদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে দূর্দিনের অসংখ্য নেতাকর্মীর স্মৃতিচারণে। মাতা রিজিয়া শহীদ ছিলেন খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী।
পিতা শেখ শহীদ ২০০৪ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান৷ সুজন তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। সুজনের বড় ভাই শেখ শাহাদাৎ হোসেন স্বাধীন তখন রাজনীতির সাথে যুক্ত৷ আওয়ামী রাজনীতির পাশাপাশি তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন৷ দলের তখন চরম সংকটময় মুহূর্ত। এমনি দূর্দিনে খুলনা মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং যুবলীগ কে সুসংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। অত্যন্ত পরোপকারী এবং দানশীল মানুষ ছিলেন। খুলনার যুবসমাজের মধ্যে তার ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ মে জন্ম নেওয়া স্বাধীন ২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর অনেকটা আকস্মিকভাবে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই নশ্বর ধরা থেকে বিদায় নেন। তবে তের বছর আগে চিরপ্রস্থান করা স্বাধীন এখনো বিচরণ করেন খুলনার হাজারো যুবকের অবচেতন মনে! তার দানশীলতার শত গল্প, উদারতা আর মানবিকতার অযুত স্মৃতিচারণে এখনো দেখি সহস্র জনকে কাতর হতে।
পিতা এবং বড় ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন। তখনই তার পরিবারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ শেখ আবু নাসের এর সন্তানেরা৷ বিশেষ করে শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল পিতা এবং ভাই হারানোর শোকে শোকাভিভূত সুজনকে অভিভাবকত্বের ছায়া দিয়ে আগলে রাখেন৷ তার ইচ্ছা এবং অনুপ্রেরণায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সুজন। সুজনের সমস্ত দায়দায়িত্ব নেন শেখ রুবেল৷ বঙ্গবন্ধুর সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ আবু নাসের এর সহধর্মিণী, মহিয়সী নারী বেগম রাজিয়া নাসের ডলির স্নেহাস্পদ সুজন ২০১০ সালের ২রা অক্টোবর খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। সম্মেলনে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীকে টপকে সাধারন সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও পান অপেক্ষাকৃত তরুণ সুজন৷ পূর্বে সংগঠন পরিচালনার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও অত্যন্ত সফলতার সাথে নিজেকে বিতর্কের উর্ধ্বে রেখে দীর্ঘ ৪ বছর ৮ মাস সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ৮ই জুন নগর ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলনে অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি মনোনীত হন। সেই থেকে আজ অবধি দীর্ঘ ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দীর্ঘ ১২ বছর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসীন সুজনকে কোনো বিতর্ক স্পর্শ করতে পারে নি। সকল প্রকার দুর্নামের উর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সততা এবং নিষ্ঠার সাথে। সংগঠনের কর্মিদের মধ্যে শুধু নয়, সমগ্র খুলনা মহানগর এবং জেলায় তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত অথবা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত কাউকে তিনি ছাড় দেন নি। ছাত্রলীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতা মহানগর, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে বহিষ্কার হয়েছেন সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িয়ে। কর্মিবান্ধব সুজনের কর্মিদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা। কারন কর্মিদের বিপদে-আপদে, সমস্যায় কিংবা প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকা, সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা প্রয়োজনে নিঃস্বার্থভাবে তাদের জন্য তদবির করা সবই করেন তিনি। দলের কর্মিই শুধু নয়, প্রতিদিন অসংখ্য সাধারন মানুষ আসেন তার কাছে। তাদের কথা আন্তরিকভাবে যেমন শোনেন, তেমনি তাদের সমস্যার সমাধান করারও চেষ্টা করেন আন্তরিকভাবে। অনেক অসহায় মানুষকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন প্রয়াত পিতা এবং বড় ভাইয়ের মতই। এসব কারনে দলের নেতাকর্মী এবং সাধারন মানুষের মধ্যে তার রয়েছে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। ক্লিন ইমেজের সদা হাস্যজ্বল এই নিরহংকারী মানবিক মানুষটিকে তাই দল, মত নির্বিশেষে প্রায় সকলেই পছন্দ করেন। এটা একই সাথে তার নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিত্বের ও সফলতা।
ছাত্রলীগকে দক্ষতার সাথে এবং সফলভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার পুরস্কারস্বরুপ সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর যুবলীগের যুগ্ন-আহবায়ক মনোনীত হন শেখ সুজন৷ আহবায়ক করা হয় দলের দূর্দিনের পরীক্ষিত সাবেক সফল ছাত্রনেতা, কর্মিবান্ধব যুবনেতা শফিকুর রহমান পলাশকে। একই সাথে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুজন। ওয়ার্ড পর্যায়ে যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে কর্মিসভা করছেন, পরিচ্ছন্ন ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব বাছাইয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছেন। তরুণরা যুবলীগের রাজনীতিতে আকৃষ্ট হচ্ছেন। দলের অনেক কর্মির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে তার হাত ধরে। অনেক শিক্ষিত বেকার কর্মি আজ পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছে তার কারনে। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও।
মানবিক ছাত্র ও যুবনেতা সুজন করোনা মহামারী ও লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার অসহায় ও দুস্থ মানুষ, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ এবং করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করেন। মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে স্ব উদ্যোগে নষ্ট হয়ে যাওয়া রাস্তা মেরামত কাজে ঝাপিয়ে পড়েছেন নিজ কর্মিদের নিয়ে। তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় গুন মানবিকতা এবং নিরহংকারীতা। নিজেকে নেতা নয়, বরং কর্মি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কর্মিবান্ধব এই সংগঠক।
রাজনীতি যদি হয় মানুষের জন্য, রাজনীতির উদ্দেশ্য যদি হয় শর্তহীন নিঃস্বার্থ জনকল্যাণ; তাহলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সাচ্চা কর্মি হিসেবে তার কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই। আদর্শহীন, আত্মপ্রচার সর্বস্ব রাজনৈতিক অবক্ষয়ের এই সমাজে তার মত আদর্শিক নেতা এবং কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। তিনি এমন এক নির্লোভ দেশপ্রেমিক তরুণ যার মধ্যে রয়েছে স্বপ্ন, ভিশন, শিষ্টাচার ও বিনয়ের পরম সম্মিলন। তার নেতৃত্ব পরম বিকশিত হবে এবং খুলনার ছাত্র ও যুবসমাজ তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্! ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সফল নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় আগামি দিনে নেতৃত্বের আরো উঁচু আসনে আসীন হবেন শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন, আজ জন্মদিনে এই কামনা।
লেখকঃ মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ নং ওয়ার্ড, খুলনা মহানগর।