ক্রীড়া ডেস্কঃমাত্র তিনদিন আগেই ঢাকা ছেড়ে রংপুরে সই করে মাকে নিয়ে হজে গেলেন সাকিব আল হাসান। তারও আগে ২০১৯ সালের বিপিএলে নতুন ঘর বেছে নিয়েছেন তামিম এবং মুশফিক। কুমিল্লা ছেড়ে তামিম খুলনা টাইটান্সে আর চিটাগাং ভাইকিংস ত্যাগ করে মুশফিক যোগ দিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে।
দেখার বিষয় ছিল মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহসহ আইকন বা এ প্লাস ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা কে কোন দলে নাম লেখান, সেদিকে। কিন্তু এমন সময় হঠাৎ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেরর ঘোষণা, কেউ কারো নয়। যে খেলোয়াড় যে দলেই নাম লেখাক না কেন, যার সাথেই কথা বার্তা চূড়ান্ত হোক না কেন, এখনো কেউ কোনো দলেরই নয়।
কেন এমন ঘোষণা? বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বলেছে, বিপিএলে বর্তমান ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর মালিকানায় যারা রয়েছে তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মালিকানা শেষ। আগামী আসরে ফ্রাঞ্চাইজির মালিকানায় থাকতে হলে, নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। নিবন্ধন করতে হবে। নতুন মালিকানা পেলেই কেবল খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ করার কাজ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট দলগুলো। এর আগে খেলোয়াড় দলে ভেড়ানোর কাজ সম্পূর্ণই অবৈধ এবং এটা বিসিবির অনুমোদিত বিষয় নয়।
আজ বিকেলেই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এক সভা শেষে এমন ঘোষণা দেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা মাহবুব আনাম। এ সময় তার দুই পাশে বসাছিলেন বিপিএলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা শেখ সোহেল, জালাল ইউনুস, লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, আকরাম খান, ইসমাইল হায়দার মল্লিক ও বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন।
নতুন করে বিপিএলে দল নিবন্ধন করা কিংবা নতুন মালিকানা না কেনা পর্যন্ত কোনো দলে কোনো ক্রিকেটারের যোগদান নিশ্চিত নয়। এ মুহূর্তে কোনো খেলোয়াড়ও কারো নয়। সব নতুন করে চূড়ান্ত করতে হবে। ক্রিকেটার দলে ভেড়ানোর কাজসহ নতুন মৌসুমে নতুনভাবে সব কিছু করতে হবে।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, তাদের অনুমোদন না নিয়ে কেউ দল গোছানোর কাজও শুরু করতে পারবে না। আগে বিসিবি তথা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে। নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে। তারপর দল গোছানোর কাজ করা যাবে।
বিপিএল কর্তৃপক্ষ আজ বিকেলে সাড়ে ৪টার পরে এক সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে। বিসিবি ও বিপিএলের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা মাহবুব আনাম শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে এ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
অনেক কথার ভিড়ে মাহবুব আনাম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত বিপিএলে বিসিবির সঙ্গে কারও চুক্তি হয়নি। তারা যা করেছে নো রিলেশনশিপ টু বিসিবি অথবা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। এটা উল্লেখ করার কিংবা স্মরণ করিয়ে দেয়ারও দরকার নেই। আমাদের আলোচনা করারও দরকার নেই বিসিবির পক্ষ থেকে।’
মাহবুব আনাম ব্যাখ্যা করে জানিয়ে দেন যে, ‘আগে বিসিবি আর বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সাথে ফ্র্যাঞ্চাজিদের চুক্তি করতে হবে, যা এখন পর্যন্ত হয়নি। মাহবুব আনাম আরও জানান, এ বছর বিপিএলের আগে দলগুলো তথা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বোর্ড এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সাথে নতুন করে আগামী চার বছরের জন্য চুক্তি করতে হবে। নতুন করে মালিকানা স্বত্বও কিনতে হবে।তার ভাষায় আগে বিপিএল কর্তৃপক্ষের সাথে আর্থিক চুক্তি, দল নিবন্ধন, তার পরই না দল সাজানো বা ক্রিকেটার সংগ্রহের কাজ।
মাহবুব আনাম বলেন, ‘আপনার সঙ্গে যদি এগ্রিমেন্ট না থাকে এবং তার নিয়মগুলো যদি আউটলাইন না থাকে আপনি যা কিছুই করেন সেটা কিন্তু গ্রহণযোগ্যতার কোনো অবস্থান নেই।
মাহবুব আনাম আরও জানান, এ মুহূর্তে কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিরই মালিকানা স্বত্ব নেই। তাদের আবার নতুনভাবে চুক্তি ও অর্থ দিয়ে দলের মালিকানা স্বত্ব কিনতে হবে।তিনি বলেন, ‘৬টা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে চিঠি দেয়া হচ্ছে যে, আপনারা মিউচুয়ালি এগ্রিমেন্টের জন্য আসেন। ধরে নিলেও ওই ছয়টা যে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ডিফল্ট করলেও কেউ তার ওই পজিশন ক্লিয়ার না করলে তো বিসিবি সেটাও করবে না।
মাহবুব আনাম বোঝানোর চেষ্টা করেন, যেহেতু বোর্ড ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দুটি নতুন দলের মালিকানা স্বত্বের আবেদন চাওয়া হয়েছে, তাই এ মুহূর্তে কোন দলের খেলোয়াড় রিটেইন করার বিষয়টিও চূড়ান্ত নয়। যেমন চূড়ান্ত নয় নতুন করে ক্রিকেটার দলে ভেড়ানোর কাজও।
তাই বিপিএল ও বিসিবি শীর্ষ কর্তা মাহবুব আনাম বলেন, দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি যে অকশনে দিয়েছে তাদের তো কিছুই নেই। সে কাকে রিটেইন করবে।
প্রেস কনফারেন্সে জানানো হয়, এ মাসের মধ্যে চুক্তিপত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিপিএল কর্তৃপক্ষ। এই মাসে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে কয়টা টিম আসবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নেগোশিয়েট করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। কন্টিনিউ অর ডি-কন্টিনিউ। দুপক্ষ যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে কন্টিনিউ করবে।’
এ নিয়ে চিঠিও দেয়ার দরকার নেই আমলে নেয়ারও দরকার নেই। নিয়মের মধ্যে যেতে হবে। কারও জন্য তো কোনো স্পেশেফিক নিয়ম তৈরি করা যাবে না। যদি ফ্রেশ সাইকেল তৈরি হয় এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল যদি ফ্রেশলি শুরু করে কোনো প্লেয়ার কারও জন্য অ্যাভেইলেভল থাকবে না। বিপিএলের চুক্তির ৩.১ অনুযায়ী প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আগে অনুমোদন করাতে হবে।’
তাহলে যে কেউ কেউ এরই মধ্যে শীর্ষ তারকাদের দলে ভিড়িয়েছেন। চুক্তিও করেছেন। সেগুলোর কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আনাম বলেন, ‘যারা কাজ করছেন তারা যদি নিজেদের অবস্থান না জানেন সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় নেই। চুক্তি যেটি করেছে তার কোনো ভ্যালিডিটি নেই। যেটা ভ্যালিট কন্ট্রাক্ট না সেটাকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার আমি কোনো যৌক্তিকতাই দেখি না।