আজ ২৯ জুলাই ২০২১,বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ বাঁচাবে সুন্দরবন, সুন্দরবন বাঁচাবে লক্ষ প্রাণ’।
বাংলাদেশের শিশুরা অন্যান্য প্রানীদের নাম না শুনলেও বা না চিনলেও বাঘকে ঠিকই চিনে নেয়। কারন ছোট বেলায় বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে, খাবার খাওয়াতে, পড়ায় বসাতে মা, নানী, দাদী, চাচিরা বাঘের ভয় দেখাননি এর নজির একেবারেই কম। আমরা ছোট বেলায় জানতাম বাঘ আমাদের মামা। সেই জন্য বাঘকে অনেক সম্মান করতাম। ক্রিকেটে বাংলাদেশ টিমকে টাইগার বলা হয়। বাঘ আমাদের শক্তির প্রতীক। অনেক সময় আমরা নিজেরাও বলি জীবনে অনেক বাঘ-ভাল্লুক, রাজা-উজির মেরেছেন- এখন মেরে দেখান। এখনো বাবা চাচাদের মুখে বাঘের গল্প শোনা যায়। তারা জানান শুধু সুন্দরবন নয় বাংলাদেশের আনাচে কানাচে বাঘের ছড়াছড়ি ছিল। চাষাবাদ করতে গেলে বাঘের ভয়। গরু চরাতে গেলেও বাঘের ভয়। আর বাজার করতে গেলে তো কোনো কথাই নাই, কারন বাজারে গেলে আসতে রাত হবে জেনে পুরো একদল মানুষ হাতে লাঠি সোটা আর মশাল নিয়ে বাজারে যাওয়া হতো। আর ফুফির মুখে বাঘের যত কাল্পনিক গল্প। এতে বুঝা যেত মানুষ বাঘকে ভয় পেত না বরং মানুষকে বাঘ নিজেই ভয় পেত। বাস্তবে বাঘ নিজেই মানুষকে ভয় পায়। তানাহলে বাঘগুলো গেল কই। তেরটি দেশে যদিও বাঘ দ্বিগুন হয়ে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে বাঘ শুধু কমতেছে। সারা বিশ্বে বন উজাড়, শিকারি ও পাচারকারীদের কারণে বাঘ মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে । সর্বশেষ জরিপ অনুসারে আমাদের দেশে বর্তমানে ১১৪ টি এর মতো বাঘ আছে। সুন্দরবন পৃথিবীর পাঁচটি বৃহৎ বাঘের আবাসের মধ্যে একটি। বাঘ এই বনের প্রাকৃতিক পাহারাদার। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাঘ সুন্দরবন প্রতিবেশ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ প্রাণী। ফলে, ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সুন্দরবনে বাঘের উপস্থিতি অপরিহার্য। সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকলে মোটাদাগে আমরা তিন ধরনের প্রতিবেশ সেবা পেতে পারি।
প্রথমত: বাঘ থাকলে বনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে বিধায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব প্রশমনে এই বন অনন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
দ্বিতীয়ত: ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে এই বন প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে কাজ করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
তৃতীয়ত: অফুরান মৎস্য ও বনজ সম্পদ প্রদানের মাধ্যমে সুন্দরবন প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের যে জীবন-জীবিকার সংস্থান করে চলেছে, তা অব্যাহত থাকবে। তাই সুন্দরবনের গুরুত্ব শুধু আম্পান, সিডর, আইলা কিংবা বুলবুলের সময় অনুধাবন করলে চলবে না, বছরের বাকি সময়ে এর নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে।
আসুন আমরা বাঘকে বাচিঁয়ে রাখার জন্য সুন্দরবনকে উজাড় না করে বাঘের অভয়ারন্য হিসেবে গড়ে তুলি।
লেখকঃ জিদান আল মুসা,পুলিশ সুপার, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিস।