বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ভোল্ট ভেঙে প্রায় ২০ কেজি সোনা চুরি ঘটনাটি সাজানো বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে উদ্ধারকৃত সোনার এসব আলামত চুরি করেছে কর্মকর্তারা। আদালত এসব মামলার আলামতের হিসেব চাইলে কর্মকর্তারা নিজেদের রক্ষা করতে চুরির নাটক সাজিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মামলার তদন্ত শেষে যশোর সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর সিরাজুল ইসলাম চার্জশিটে এসব তথ্য জানিয়েছেন। আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে সাবেক পাঁচ কর্মকর্তা, এক কর্মচারী ও একজন বহিরাগতকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বাঁধুলী খালপাড়া গ্রামের মৃত জালাল সরদারের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদার, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জয়পুর গ্রামের রণজিৎ কুন্ডুর ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভোল্ট ইনচার্জ বিশ্বনাথ কুন্ডু, বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভোল্ট ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার চারুয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভোল্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ, বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভোল্ট ইনচার্জ আরশাদ হোসাইন, খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমান মল্লিকের ছেলে বেনাপোল কাস্টমসের বেসরকারি কর্মী আজিবার রহমান মল্লিক ও বেনাপোলের ভবেরবেড় পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের ছেলে বহিরাগত শাকিল শেখ। অভিযুক্ত ভোল্ট ইনচার্জরা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ওই ভোল্টে থাকা সোনা তদারকির কোনো কর্মকর্তা ছিল না। ভোল্টের একটি মাত্র চাবি ছিল, যা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা নিজের হেফাজতে রাখতেন। এছাড়া, গুদামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল না। অথচ বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তারা কোনো পদক্ষেপ নিতেন না। কী পরিমাণ সম্পদ ছিল তারও সঠিক হিসেব রাখতেন না। বিভিন্ন সময় সোনা উদ্ধার করে গুদামে রাখতেন। কিন্তু আদালতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতেন না। এ সুযোগে বিভিন্ন সময় দায়িত্বে থাকা এসব কর্মকর্তারা আলামতের সোনা আত্মসাৎ করেন।
একপর্যায়ে বিভিন্ন মামলার আলামতের হিসেবে গরমিল দেখা যায়। আদালতে ওইসব আলামত উপস্থাপন করা লাগবে বিধায় অভিযুক্ত আসামিরা ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখে। নিজেরা ভোল্টের তালা ভেঙে চুরির নাটক সাজায়। আদালত বিভিন্ন মামলার আলামত উপস্থাপন করার নির্দেশ দিলে চুরি হয়ে গেছে বলে জানানো হয়।
চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়েছে বেসরকারি কর্মচারী আজিবরের কাছে প্রায় সময় আসতেন শাকিল শেখ। তারা দু’জনই অপর পাঁচ কর্মকর্তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর রাত ৮টা থেকে ১১ নভেম্বর সকাল ৮টার মধ্যে যে কোনো সময় বেনাপোল কাস্টমস হাউজের পুরাতন ভবনের ২য় তলার গোডাউনের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে একদল চোর। এরপর তারা ভোল্টের তালা ভেঙে ১৯ কেজি ৩শ’ ১৮ দশমিক ৩ গ্রাম সোনা চুরি করে পালিয়ে যায়। যার মূল্য ১০ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ ৬২ টাকা। ঘটনার সময় সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে কাস্টম হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানার কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। পরে যশোর সিআইডি পুলিশের ওপর মামলাটির তদন্তভার অর্পণ করা হয়। সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর জাকির হোসেনের বদলির পর দায়িত্ব পান আরেক ইন্সপেক্টর হাসান ইমাম। সর্বশেষ, ইন্সপেক্টর সিরাজুল ইসলাম এ মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। অভিযুক্ত সকল আসামিকে চার্জশিটে আটক দেখানো হয়েছে।