একটু টাকা-পয়সা হলে মানুষ প্রথমেই বাদ দেয় বয়লার বা ফার্মের মুরগি খাওয়া। বিত্তশালীদের বাড়িতে এটা তো রীতিমতো নিষিদ্ধ।
বয়লার মুরগি এখন স্কীকৃত নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার। তারা মাসে একবার গরুর মাংস কিনতে পারে না, খাশির মাংস তো দুঃস্বপ্ন। ইলিশ, ভেটকি, পারশেসহ সুস্বাদু মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে। গরীব মানুষের প্রাণীজ আমিষের একমাত্র এই উৎসটিও এখন লুটেরাদের কবলে।
মুরগী পরিবহন করা পিকআপগুলোতে দেড় থেকে দুই হাজার কেজি মুরগী ধরে। তথ্যটি এক ব্যবসায়ীর। বেশিরভাগ মুরগীর ফার্মই খুলনার ভেতরে।
তেলের দাম বেড়েছে। তারপরও সবচেয়ে দূরের উপজেলা কয়রা থেকে মুগরী পিকআপে করে ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার পর্যন্ত আনতে সর্বোচ্চ খরচ বাড়বে ৩৫০/৪০০ টাকা। কেজি প্রতি খরচ বেড়েছে ১টারও কম। অথচ গত ২/৩ দিনে প্রতি কেজি বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
একই অবস্থা ডিমের। নিম্নআয়ের সংসার, ব্যাচেলর জীবন, মেস বাড়িতে প্রধান খাবার ডিম। এখানেও লুটতরাজ।
১৫ দিনের মধ্যে একটি ডিমের দাম ৪/৫ টাকা বাড়ে কিভাবে ? ডিম কি ইউক্রেন থেকে আসে? পরিবহনে কতো টাকা তেল খরচ হয় ?
সারাদেশে নাকি একই চিত্র, দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ফলাও করে এই সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।
অথচ সরকারের এতো সংস্থা কারও কোনো গা নেই। বাজারের পণ্য নিয়ে নৈরাজ্য প্রতিহতের জন্য ভোক্তা অধিকার আছে, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর আছে, জেলা প্রশাসন আছে-সবাই যেন দেখেও দেখছে না।
এভাবেই চলবে ???
চাল, তেল, ডাল, চিনি এমন কোনো জিনিস নাই যার দাম বাড়েনি।
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে, অনুমোদন হয়নি। অথচ পুরাতন তারিখ দিয়ে বেশি দাম লিখে তেল বাজারে চলে এসেছে। মানুষ বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনছে।
বোরো ধান উঠেছে যুদ্ধের আগে। সেই চালের দাম কেজিতে ৭/৮ বাড়লো কিভাবে ? গত কয়েক মাসে চালের পেছনে খরচ বেড়েছে ৭০০/৮০০ টাকা।
মসুর ডাল নাগালের বাইরে বছরের শুরু থেকেই।
প্রতিদিন মাছ-মাংস অনেক আগে থেকেই বিলাসিতা। ভাত-ডালের সঙ্গে ভাজি, ভর্তা দিয়েই দিনগুলো কাটছিলো। শুক্রবার বয়লার মুরগি মাংসে মনকে প্রবোধ দেয়া যেত।
গরীবের এই শান্তিটুকু সহ্য হচ্ছে না।
দাম বাড়তে দেখে একে একে সব খাওয়া বাদ দিয়েছে।
চালের দাম এতো বাড়লে মানুষ খাবে কি?
আমি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি, বেশিরভাগ নিত্যপণের দাম বৃদ্ধির পেছনে তেল-যুদ্ধ যতো না দায়ী, এর চেয়ে বেশি দায়ী লাগামগীন লুটতরাজ।
কথা হচ্ছে এর শেষ কোথায় ?
একটি মানুষ, সরকারের একটি সংস্থা বাজারে এসে জানতে চাইবে না-এটা কেন করছেন ?
গরীব মানুষগুলোর পাশে দাড়ানোর কেউ থাকবে না ?
কাজী নজরুলে ‘আমার কৈফিয়ৎ’ এর মতো বলতে ইচ্ছে করছে,
বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!
লেখকঃ হাসান হিমালয়, সাংবাদিক