পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে ছোটভাই নিজাম উদ্দিন মুন্নাকে (৩০) নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে নাড়িভুঁড়ি বের করে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেন বড়ভাই সালাউদ্দিন কামরুল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দিতে ছোটভাইকে নিজ হাতে খুন করে ‘পূর্বশত্রুতা হাসিল’ করতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।
এদিকে নিজাম উদ্দিন মুন্নার স্ত্রী নাসরিন আকতার সুমি বাকপ্রতিবন্ধী (বোবা)। তাদের রয়েছে আট মাস বয়সী সন্তান ইব্রাহিম ও আড়াই বছরের মেয়ে বিবি মরিয়ম। বাবার অবর্তমানে কী হবে এই অবুঝ শিশু দুটির। সন্তানদের নিয়ে একা কী করবেন বাকপ্রতিবন্ধী নাসরিন আকতার সুমি।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহমদের সমর্থক নিজাম উদ্দিন মুন্না (৩০) বড়ভাইয়ের হাতে খুন হন। আর সালাউদ্দীন কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের সমর্থক ছিলেন।
এদিকে ছেলের খুনের জন্য আরেক ছেলের ফাঁসি চাইলেন তাদের মা। তাদের মা জিন্নাত আরা বেগম বলেন, আমার ছেলের ফাঁসি চাই। ও প্ল্যান করে খুন করেছে। আমার বউমা (নাসরিন আকতার সুমি) বোবা, কথা বলতে পারে না। তার মাসুম দুই সন্তানের কী হবে?
তিনি বলেন, আমার ছেলের খুনের জন্য আমার আরেক ছেলে কামরুল ইসলাম দায়ী। আমি তার ফাঁসি চাই। তিনি বলেন, আমার বড় নাতি ইমন দেখছিল- নিজাম বড় ভাইয়ের পা ধরে বলছিল মাফ করে দাও; কিন্তু সে মাফ করেনি। খুন করে ফেলেছে।
নিহত নিজামের স্ত্রী নাসরিন আকতার সুমি বাকপ্রতিবন্ধী। তিনি নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছিলেন সব ঘটনা। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তার মা ও শাশুড়ি।
সুমি জানান, অনেক দিন ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল কামরুল। হত্যার হুমকিও দিয়েছিল।
নিহত নিজামের বোন বিবি জোহরা মুক্তা বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার অবুঝ ভাতিজা-ভাতিজির কী হবে?
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ৭টার দিকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বড়ভাই কামরুল দলবল নিয়ে নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন বার কোয়ার্টার ফজু মিয়া বাইলেন এলাকার ইউসুপ আলীর বাড়ির সামনে পথরোধ করে নিজামের। এরপর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নাড়িভুঁড়ি বের করে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাকে। নিজাম উদ্দিন মুন্নার পিতার নাম গিয়াস উদ্দিন।
পরিবারের দাবি, চসিক নির্বাচনে সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় মুন্নার বড়ভাই সালাউদ্দিন কামরুল।
জানা গেছে, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বড়ভাই কামরুলের সঙ্গে বিরোধ ছিল মুন্নার। গত ছয় মাস আগে পৈতৃক জায়গা-জমির দলিল কৌশলে নিয়ে জব্দ করে রাখেন সালাউদ্দিন কামরুল। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় কথাকাটাকাটি হলেও কোনো সমাধান হয়নি। চসিক নির্বাচনের পর দলিল উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়েছিলেন মুন্না। আর এ ভয়েই নির্বাচনের দিনই ছোটভাইকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বড়ভাই কামরুল।
বুধবার পাহাড়তলী থানার ওসি হাসান ইমাম যুগান্তরকে বলেন, এটা নির্বাচনী সহিংসতা নয়। পারিবারিক কলহ থেকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।