খাদ্যাভ্যাস থেকে পুরোপুরি মাংস বাদ দেয়ার স্বাস্থ্যগত যেমন সুফল রয়েছে তেমনি কুফলও রয়েছে। আপনি যদি খাদ্যাভ্যাস থেকে মাংস বাদ রাখতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা মাংসের পরিপূরক।
মাংস হচ্ছে প্রোটিনের উৎস। তাই মাংস থেকে আপনার শরীর যতটুকু প্রোটিন গ্রহণ করে তার বিপরীতে অন্য খাবার থেকে তা পূরণ করতে হবে।
মাংস না খেলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দূরারোগ্য ব্যাধির সম্ভাবনা যেমন কমবে তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে খাদ্য তালিকায় শুধু উদ্ভিজ্জ খাবার রাখলে হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
যারা মাংস খান না তবে মাছ খান তাদের মাঝে মাংসভোজীদের তুলনায় ‘হিপ ফ্র্যাকচার’ বা পশ্চাতের হাড় ক্ষয়ের ঘটনা বেশি দেখা যায়। এছাড়া উদ্ভিজ্জ উৎসনির্ভর কিছু বিশেষ খাদ্যাভ্যাস আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে এদিক থেকে। যে কারণে উদ্ভিজ্জ খাবারে অভ্যস্তদের হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বাড়ে।
ভেজিটেরিয়ান’ আর ‘ভিগান’দের খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন ইত্যাদি হাড় গঠনকারী পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে সমস্যা হল হাড় গঠনকারী অন্যান্য উপাদানগুলোর অভাব তাদের শরীরে থেকে যায়। বিশেষত, ক্যালসিয়াম।
রক্ত জমাট বাঁধা, পেশির সংকোচন-প্রসারণ এবং স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালসিয়ামের ধারাবাহিক সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর খাবার থেকে যখন সেই চাহিদা মেটানো যায় না তখন শরীর তার অভ্যন্তরীণ ক্যালসিয়ামের মজুদের ওপর নির্ভরশীল হয়, আর সেই মজুদ হল হাড়।
হাড়ক্ষয়ের আরেকটি সমস্যা হল প্রোটিনের ঘাটতি। ক্যালসিয়াম শোষণে এবং হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই পুষ্টি উপাদান। উদ্ভিজ্জ উৎসভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলেও ‘ভেজিটেরিয়ান’রা যতটুকু খান তা হাড় গঠনের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
আসুন জেনে নেই খাদ্যাভ্যাস থেকে মাংস বাদ দিলে খেতে হবে যেসব খাবার-
খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, বয়স, জিন সবকিছু মিলিয়ে হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। বয়স আর জিন কারও নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা মানুষের নিয়ন্ত্রণে।
উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে কপি, শালগম, ওলকপি, বাঁধাকপি, ‘বক চই’ ইত্যাদিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা সবচাইতে বেশি। ‘টফু’, কাঠবাদাম, কমলা, ডুমুর ইত্যাদিতে মাঝারি। পালংশাক, বিট, ‘সুইস চার্ড’ বা বিট পাতা ইত্যাদিতে সবচেয়ে কম ক্যালসিয়াম মেলে।
এছাড়া প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খেতে হবে ডিম, দুধ, ডাল, খিচুড়ি, বাদাম, ও যেকোনো ধরনের মাছ। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে।
লেখক: পুষ্টি বিভাগের প্রধান, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল।