ইমরান খান :: দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলে বোঝা যায় সেগুলো লাউ বা কুমড়া নয়। মাচায় জালের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো ভেতরে ঝুলছে ব্লাক বেরী জাতের রসালো তরমুজ। অসময়ে উৎপাদিত তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পাঁচ জন কৃষক। কৃষি বিভাগের সহায়তায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। ফলে উপজেলার অনেক কৃষকই এই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
চলতি মৌসুমে উপজেলার বাবুখালী, দীঘা, বিনোদপুর, রাজাপুর ও পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে পাঁচ জন কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজের চাষ করেছেন। ফলে এ অঞ্চলে তরমুজ চাষের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র মতে, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে এ অঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি উপযোগী। কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় এবার উপজেলার পাঁচজন কৃষক ৫ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বিনোদপুর ইউনিয়নের মো: মিজানুর রহমান ৩৩ শতক জমিতে ব্ল্যাক বেরী তরমুজ চাষ করেছেন। দ্বিতীয়বারের মতো তরমুজ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘১৩০০ তরমুজ চারা ক্ষেতে রোপন করেছেন। অল্প খরচে মাত্র ৬৫ দিনে তার জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। একেকটি তরমুজের ওজন এখন ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি হয়েছে। আশানুরূপ দাম পেলে এ বছর লক্ষাধিক টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেতে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচায় অসংখ্য ছোট বড় তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলোর রং বাহারি। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি আবার কালচে সবুজ বর্নের।
প্রথমবারের মতো বাবুখালী ইউনিয়নের চুড়ারগাতি গ্রামের কৃষক অনুপ বিশ্বাস গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কুমারের কাছে জানতে পেরে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ব্লাক বেরী জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করি।
তিনি আরও জানান, মাত্র ৭০ দিনের মাথায় তিনি সফলতা পেয়েছেন। তার খেতে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে। ওই জমি থেকে তিনি এ বছর দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে কৃষকদের বীজ, পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। আমার কর্মরত ইউনিয়নে ৪ নম্বর ব্লকে ৩৩ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া ও মাটির যে গুনাগুন এতে এই তরমুজগুলো ভালো ফলন হবে। যারা লাউ-কুমড়া চাষ করে তারা সহজেই তরমুজ চাষ করতে পারবো।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এবছর ৫ টি প্রদর্শনী ছিল। আরও দুই তিনজন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে করেছে চাষ করেছেন। আমরা তরমুজ চাষ জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি। এটা লাভজনক ফসল। পাট বাদ দিয়ে উচু জমিতে কেউ যদি গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে তাহলে লাভবান হবে।’