বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য খুবই ভালো সময় যাচ্ছে। বহু কোম্পানির শেয়ারদর কম ঝুঁকির সীমানায় রয়েছে। এর মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেই বললেই চলে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বেশির ভাগ ইউনিটের দর বর্তমানে ১০ টাকার নিচে রয়েছে। আর যে ইউনিট বা শেয়ারের দর কম থাকে তাতে বিনিয়োগ করলে সে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম থাকে। আর এ জন্যই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ঝুঁকি কম মনে করছেন তারা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে ঢেলে সাজানোর কথা বলে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কমিশনের এমন চেষ্টা অব্যাহত থাকলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড কম ঝুঁকি নেয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত হবে।
সম্প্রতি দুবাইতে এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের লভ্যাংশ পাবে। কারণ প্রতিটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১০ থেকে ১৮ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবে। এখন থেকে যদি কোনো বিনিয়োগকারী লোকসান করতে না চায়, তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া বন্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এই দুই ক্ষেত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
এ ব্যাপারে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, পৃথিবীর সব দেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ঝুঁকি কম। সেসব দেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ওপর দক্ষ লোক দিয়ে ফান্ডগুলো পরিচালিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সেটা একটু বিপরীত ছিল। আগে যারা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন, তারা তাদের ফান্ডগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারেনি। তবে বর্তমানে কিছু দক্ষ লোকবল দিয়ো মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের ফান্ড সঠিক ব্যবহার করে একটি ভালো মানের রিটার্ন দিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, ‘তিনি মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়েও ভালো কিছু করার চিন্তা করছেন। তিনি যেহেতু বলেছেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ১০ থেকে ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিবে, সেহেতু ফান্ডগুলো নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ভালো কোনো চিন্তা রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে দুবাইতে রোড শো করছেন এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছেন। বিশেষ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।’
চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পরিচালক এবং এস আর ক্যাপিটালের এমডি সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে কত শতাংশ দিবে তা ম্যানেজম্যান্টের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু বর্তমান বাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটের দর কম, তাই এ খাতে বিনিয়োগেরও ঝুঁকি কম।’
ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে পিএলএফএস ইনভেস্টম্যান্টের সিইও আব্দুল মুক্তাদির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালিত হয় পুঁজিবাজার নিয়ে যাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের মাধ্যমে। কোনো বিনিয়োগকারী যদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে তা যেন ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে করে। এতে করে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম থাকবে। আর বিনিয়োগকারী নিজে বিনিয়োগ করলে সে বিনিযোগে ঝুঁকি বেশি থাকে।’
তিনি আরও বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ হতে হবে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি। অল্প দিনের জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারী লাভবান হতেও পারে, আবার লোকসানও হতে পারে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডর ইউনিট দর ১০ টাকার উপরে রয়েছে। বাকি ৩১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে।