পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুদের নিঁচু জাতের মনে করে। যুগেযুগে দেশেদেশে সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগরিষ্ঠ, দূর্বলের উপর সবলরা অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম করেছে। ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ কারনে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং ধর্মীয় দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের কর্ণাটকে। কর্ণাটকের এক সাধারন কলেজছাত্রী মুসকান। কলেজ কর্তৃপক্ষের হিজাব নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এই তরুণী সহপাঠীদের সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে রুঁখে দাঁড়িয়েছে। হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বের বৈষম্য আর অন্যায়ের শিকার লক্ষ, কোটি মজলুমের সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস। তার এই প্রতিবাদ সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগরিষ্ঠের, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের, দূর্বলের উপর সবলের এবং শাসক কর্তৃক সাধারন জনগোষ্ঠীর উপর গায়ের জোরে অন্যায়ভাবে কোনকিছু চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে।
মুসকানের উচ্চশব্দের ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান আসলে ‘জয় শ্রীরাম’ এর বিরুদ্ধে নয়। মুসকানের স্লোগান বিশ্বের নিপীড়নের শিকার কোটি মানুষের পক্ষে-সাহস করে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। মুসকানের স্লোগান সব ধর্মের স্বাধীনতার, সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের। মানুষ সবসময় সাহসীদের পক্ষাবলম্বন করে। একশো জনের বিরুদ্ধে মুসকানের একার সাহসী স্লোগান সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। সারাবিশ্ব আজ মুসকানের সাহসের জয়গান গাইছে। মুসলিম মুসকানের পক্ষে শত হিন্দু বন্ধু ও দাঁড়িয়েছে রাজপথে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হিজাব, বোরখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বস্তুত এই অবস্থান হিজাব, বোরখার পক্ষে নয়- এই অবস্থান সমাজে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে। কোন নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষে নয়, অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের পক্ষে।
সমাজ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংকটে যুগেযুগে আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসকানের মত সাহসী কেউ কেউ। সমাজ, রাষ্ট্রের কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়িয়ে গেয়েছে ন্যায় ও সাম্যের গান। প্রতিষ্ঠা করেছে মজলুমের অধিকার। বারবার অন্ধকারে পতিত সমাজ, রাষ্ট্রকে পরিচালিত করেছে আলোর পথে। মুসকান আবার পথ দেখাক। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। জাতির প্রতি জাতির, ধর্মের প্রতি ধর্মের, সম্প্রদায়ের প্রতি সম্প্রদায়ের পরিশেষে মানুষের প্রতি মানুষের সকল হিংসা, বিদ্বেষ এবং বৈষম্যের অবসান হোক। সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হোক! মানুষ হিসেবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ কিংবা গোত্র নয় সাম্য ও ন্যায়ের পক্ষে হোক আমাদের অবস্থান।
লেখক: মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা