অনলাইন ডেস্কঃঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ট্যানারিতে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া রয়েছে ২০ কোটি টাকা। এত টাকা বকেয়া থাকায় অর্থ সংকটে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে পেশা বদলাচ্ছেন। আর যারা টিকে আছেন তারাও আসন্ন কোরবানির মৌসুমে চামড়া কেনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে উদ্বেগে আছেন।
শেখপাড়ার আমান লেদার কমপ্লেক্সের ম্যানেজার ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, এমনিতেই খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই দেউলিয়া হয়েছেন। কেননা প্রায় ২০ বছর ধরে ট্যানারির কাছে টাকা পাওনা রয়েছে খুলনার ব্যবসায়ীদের। টাকার অভাবে অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য দোকান দিচ্ছেন। আবার কেউ ইজিবাইক চালাচ্ছেন। অথচ খুলনা চামড়া ব্যবসার জন্য ছিল একটি সম্ভাবনাময় এলাকা।
ফুলতলার সুপার এস লেদার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ ভুইয়া বলেন, তিনি গত কয়েক বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়। তারপরেও এবার তিনি খুলনা বিভাগের সব চমাড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বাজারদর অনুযায়ী তিনি চামড়া কিনবেন।
জায়গা নিয়েও বিপাকে আছেন খুলনার চামড়া পট্টি শেখপাড়ার ব্যবসায়ীরা। কারণ এখানকার ব্যবসায়ীদের নেই দোকান ঘর। তারা চামড়ার মৌসুমে সড়কের পাশে বসে চামড়া কেনেন এবং সেখানেই প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করেন। এবার এ সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে ব্যবসায়ীরা কোথায় অবস্থান নেবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
খুলনা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাম ঢালী বলেন, জায়গা না পেলে লোকসানের আশঙ্কায় এবার ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন। সিটি মেয়র তাদের আশ্বস্ত করেছেন, এবার কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে চামড়া প্রসেসিংয়ের জন্য।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর কোরবানির পর নগরীর শেখপাড়া চামড়া পট্টিতে পশুর চামড়া আসে এবং সেখানেই প্রক্রিয়াজাত করে চামড়া পাঠানো হয় নাটোর, ঈশ্বরদী অথবা সরাসরি ঢাকার ট্যানারিতে। কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে সময় লাগে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন। কিন্তু গত বছর সময় পাওয়া যায়নি। কেননা খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের এখন আর দোকান নেই। রাস্তাতেই তারা প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম করেন। খুলনায় অর্ধশত ব্যবসায়ী থাকলেও এখন মাত্র একটি দোকানে ৮-১০ জন ব্যবসায়ী কোনোরকমে অবস্থান নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসাটি টিকিয়ে রেখেছেন। অন্য দোকানগুলো চামড়ার পরিবর্তে পরিণত হয়েছে লোহা লক্কড়ের দোকানে। এজন্য সারাবছর একটি দোকানে প্রসেসিং কার্যক্রম পরিচালিত হলেও কোরবানির সময়ই সংকট সৃষ্টি হয়। কেননা ওই সময় রাস্তায়ই প্রসেসিং কার্যক্রম করতে হয়। মাত্র তিন দিন ছুটি থাকে। এত কম সময়ের মধ্যে প্রসেসিং করে শেষ করা যায় না। এ কারণে গত বছর ৪-৫ হাজার চামড়া নষ্ট হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তাছাড়া চামড়ার মোকামও খোলে কোরবানির ১০ দিন পর। এতে ওই ১০ দিনই তাদের অপেক্ষা করতে হয় বিক্রির জন্য। এমন জায়গা না থাকলে চামড়া কিনে বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এজন্য কোরবানির সময় কমপক্ষে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন চেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চামড়া কেনা বন্ধ থাকলে চোরাই পথে ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া দামও কমতে পারে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনে ভারতে পাচার করার আশঙ্কাও আছে।