চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাগেরহাটের কচুয়ায় সহপার্টির সাথে প্রেমের ঘটনা ধামা চাপা দিতে মুশফিকুর রহমান রাফি (১৬) নামের এক এসএসসি পরিক্ষার্থীকে বাড়ি ডেকে নিয়ে পিটিয়ে তার নামে মিথ্যা চুরি মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার পর বাগেরহাটে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ছেলের পরিক্ষা ও ভবিষ্যত চিন্তা করে তুচ্ছ এ বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসার জন্য থানার ওসি ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পিতা পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের আড়ৎ শ্রমিক মোঃ মশিউর রহমান রহমান। এসময় কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার মা মনিরা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ও সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে মোঃ মশিউর রহমান জানান, তার ছেলে মোঃ মুশফিকার রহমান রাফি নানা বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়ায় থেকে কচুয়া সিএস পাইলট সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। একই বিদ্যালেয় কচুয়া উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি খোন্দাকার নিয়াজ ইকবালের মেয়েও পড়াশোনা করে। তারা এবছর এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নেবে। তাদের দু’জনের মধ্যে কয়েকদিন থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়েছে। স্কুলে পড়া অবস্থায় এ সম্পর্ক যাতে গভীরে না যায় সেজন্য আমরা ছেলেকে ও মেয়েকে অনেক বুঝিয়েছি। এরপরও তারা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
বিষয়টি সাংবাদিক নিয়াজ ইকবাল না মেনে ভিন্ন খাতে নিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যার পর তার মেয়েকে দিয়ে রাফিকে ফোন করিয়ে তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে হাতুড়ী দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যায়ে কচুয়া থানার ওসিকে বলে সাংবাদিক নিয়াজ ইকবাল কে হত্যা চেষ্টা ও বাসায় চুরি করেছে। পরে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে রাফিকে থানা পুলিশে সোপর্দ করে।
থানা পুলিশ রাফিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই থানা হাজতে আটকে রাখে। খবর পেয়ে আমরা আত্মীয় স্বজন নিয়ে থানায় গেলে থানার ওসি শেখ সফিকুর রহমান আমাদের কোন কথা না শুনে থানা থেকে চলে যেতে বলে। পরে সাংবাদিক ও তার ভাই ইনতিয়াজ খোন্দকার নিশাত ওসি সাহেবের কক্ষে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে একটি মামলা রেকর্ড করিয়ে আসে। নিয়াজ ইকবাল বাদী হয়ে মামলায় রাফি ও অন্য এলাকার আল আমিন নামের দুইজনকে আসামী করে ২০ হাজার টাকা চুরি ও ধারালো ছোরা দ্বারা নিয়াজ ইকবালকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। পরের দিন স্কুল ছাত্র রাফিকে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করে। এখনও সে কারাবন্ধি।
রাফির পিতা বলেন, আমি দরিদ্র মানুষ। ঢাকার একটি আড়তে শ্রমিকের কাজ করে পরিবারের ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাই। আগামী ২০২০ সালে সে এসএসসি পরিক্ষা দিবে। এমন মুহুর্তে উদ্দেশ্যমুলকভাবে আমার কিশোর ছেলেকে হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে থানা পুলিশে দিয়েছে সাংবাদিক নেতা। তিনি বলেন, আমার সাথেও সাংবাদিক নিয়াজ ইকবালের পুর্ব পরিচয় রয়েছে। আমার জানামতে সে দিনে ও রাতে বেশীরভাগ সময় কচুয়া থানায় অবস্থান করে। এবং থানা পুলিশের সকল সালিশ বিচার তার মধ্যস্থতায় হয়। আমার ছেলে রাফির এ বিষয়টি জানার পর কচুয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক বাগেরহাট জেলা পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান ঝুমুরসহ এখানের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্ধ এ ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে মিমাংসার জন্য অনুরোধ করে ছিলেন। অথচ, কচুয়া থানার ওসি শেখ সফিকুর রহমান ও সাংবাদিক খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল শোনেন নাই।
তাই আমি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আর আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে আহত করা এবং তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা মামলা রেকর্ড করা ঘটনার সঠিক তদন্তপুর্বক বিচার দাবি করছি।
এবিষয়ে খোন্দকার নিয়াজ ইকবালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে হত্যার উদ্যেশ্যে চাকু মেরেছে। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় হামলা করতে গেছে। এবিষয়ে কচুয়া থানার সরকারী মোবাইলে কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
তবে পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় প্রেমঘটিত বিষয়ে ঘটনাটি ঘটেছে বলে তিনি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, তদন্ত হলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।