মোঃ এনামুল হক :: অতিমাত্রার লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় মোংলায় যখন কৃষির চাষাবাদ ও গবাদি পশু পালন একেবারে প্রায়ই উঠেই গিয়েছিলো। এখন সেখানেই হচ্ছে মৌসুমী শাক-সবজি ও ছাগল-ভেড়ার পালন। এতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাভলম্বি হয়েছেন শতাধিক নারী পরিবার। এ সকল নারীদের পরিবারের খোরাক ছাড়াও বিক্রি করে হচ্ছে বাড়তি আয়ও। আর এসব সম্ভব হয়েছে উপজেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ দপ্তর এবং ফ্রেন্ডশীপ সংস্থার সহায়তায়। তাই ফ্রেন্ডশীপের প্রতি যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সুবিধাভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের।
উপজেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ দপ্তর জানায়, লবণ পানি অধ্যুষিত উপকূলীয় জনপদ মোংলা। এখানে এক সময়ে প্রচুর ফসলের চাষাবাদ হতো। প্রত্যেক বাড়ীঘরেই ছিলো গরু, মহিষ ও ছাগলের মত গবাদি পশু। বাড়ীর উঠানে হতো ধানসহ মৌসুমী ফসলের চাষাবাদ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ও ভূগর্ভস্ত পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় চাষাবাদ বিঘ্নিত হতে শুরু করে। এছাড়া এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় সেই গবাদি পশু ও ফসলের চাষাবাদ। এখন আর আগের মত মাঠে নেই ধান, বাড়ীর আঙ্গিনায় নেই সবজি ও গোয়ালে নেই গরু, ছাগল-ভেড়া। কিন্তু লবণ অধ্যুষিত এ এলাকার মানুষের দুর্বিসহ জীবনজীবিকার কথা চিন্তা করে মাঠে নামেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশীপ। উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ উলুবুনিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের তাদের দেয়া লবণ সহিঞ্চু উন্নতজাতের ফসলের বীজ ও ছাগল-ভেড়া পালনের উপরণাদি সহায়তায় তাতে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার গৃহিনীরা। কৃষি ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ এ সকল গৃহিনীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লবণ সহিঞ্চু শাকসবজি ও ভেড়া-ছাগল পালনে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১২০টি নারী পরিবার এখন মৌসুমি সবজি চাষে ও ভেড়া-ছাগল পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কোন ধরণের কীটনাশক ছাড়াই জৈব সার দিয়ে তারা শীতকালীন ও বর্ষাকালীন সবজি চাষ এবং সারা বছর ধরে গবাদি পশু পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাদের এ সফলতা দেখে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন আশপাশের নারীরাও।
উলুবুনিয়া গ্রামের সুবিধাভোগী মুক্তি রায় ও নওরোজ সুলতানা বলেন, আমরা ফ্রেন্ডশীপ থেকে প্রশিক্ষণ ও ১৫/১৬ প্রকার সবজি বীজ পেয়ে বাড়ীর পতিত জমিতে কৃষি করি। তা দিয়ে পরিবারে চাহিদা মিটিয়ে গত বর্ষা মৌসুমে ১০/১২ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেছি। এতে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। আর চলতি শীত মৌসুমের সবজি দিয়েও ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারবো। আগের চেয়ে আমরা এখন অনেক ভাল আছি, সবজি চাষ করে। ১৬ প্রকার সবজির মধ্যে রয়েছে লেটুস পাতাও। লবণাক্ত এলাকায় লেটুস পাতার চাষ করে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। এ দেখতে প্রতিদিন আশপাশের নারীরাও আসছেন। তাদের উদ্বৃত্ত বীজ দিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবেশী নারীদেরকেও। তাই ক্রমেই বাড়ছে সবজি চাষের প্রবণতাও।
একই এলাকার সুবিধাভোগী শিবানী মন্ডল ও হেনা বেগম বলেন, আগে সংসারে স্বচ্ছলতা ছিলনা। টাকা দিয়ে ছাগল-ভেড়া কেনার সামর্থ আমাদের ছিল না। কিন্তু ফ্রেন্ডশীপ আমাদের ছাগল-ভেড়া দিয়েছে। দুই বছরে তা লালনপালন করে ছাগল-ভেড়ার সংখ্যাও বেড়েছে। ছাগলের দুধ বিক্রি ও আমরা খেতে পারছি। এখন বাচ্চাসহ প্রত্যেকের ৪/৫টি তারও বেশি ছাগল-ভেড়া হয়েছে। পাশপাশি আমরাও এখন দুই একটি কিনতে পারছি। আমরা এখন ছোটখাটো খামারী হয়ে গেছি। আগের চেয়ে এখন আর্থিকভাবে অনেক ভাল আছি।
সোনাইলতলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মো: নওশের শেখ বলেন, লবণাক্ততার কারণে আমাদের এ এলাকায় আগে সবজি চাষ ও গরু, ছাগল-ভেড়া পালনের উপযোগী ছিলনা। কিন্তু ফ্রেন্ডশীপ সংস্থার এএসডি প্রকল্প দুই বছর ধরে কাজ করছে। তাতে এখানকার নারীরা কৃষি ও পশু পালনে প্রশিক্ষিত হয়েছে। ফলে তারা এখন সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালনে বিল্পব ঘটিয়েছেন। এখানকার নারীরা এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তাদের দেখা দেখি আশপাশের গ্রামের নারীরাও এখন এর উপর ঝুঁকছেন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশীপের এএসডি প্রকল্পে প্রজেক্ট অফিসার মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এ এলাকায় ঘুরে দেখি অতি লবণাক্ততার কারণে ফসল না হওয়ায় বাড়ীঘরের আঙ্গিনা কেউ কোন চাষাবাদ করেন না, এমনকি পশুও পালন করেন না। পরবর্তীতে এনিয়ে আমরা গবেষণা করে বিপল্প পদ্ধতি বের করে নারীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাই তাতেই ব্যাপক সফলতা এসেছে। এতে পরিবারের খাওয়ার খোরাক বাদেও মৌসুমে সবজি ও ভেড়া-ছাগল দিয়ে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। এখন তাদের ক্ষেত ভরা শাকসবজি আর গোয়ালে বাড়ছে গবাদি পশুর সংখ্যাও।
ফ্রেন্ডশীপ’র এএসডি প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় আমরা যখন কাজ করতে আসি তখন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। এটি লবণাক্ত এলাকা, এখানে লবণাক্ততার কারণে মানুষের চাষাবাদ বিশেষ করে সবজি চাষের জমি পতিত দেখা গেছে। হাঁস-মুরগি, ভেড়া-ছাগল পালন করতো না। তারা আর্থিকভাবে অনেকটা কষ্টের ভিতর জীবনযাপন করছিলো। তখন আমরা এ এলাকায় ১২০টি পরিবার নিয়ে ৪টি গ্রুপ করি। এ গ্রুপের সদস্যদের আমরা উদ্ভুদ্ধ করেছি, যদি আমরা বীজ সরবরাহ করি এবং আধুনকি পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিই। পরবর্তীতে তারা এগিয়ে আসায় উপজেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালনের প্রশিক্ষণ দিই। তারপর এখন বছরে দুইবার বর্ষা ও শীতকালে ১৫/১৬ প্রকার বীজ সরবরাহ করে থাকি। সেই বীজ দিয়ে তারা কীটনাশকমুক্ত জৈব সার দিয়ে সবজি চাষাবাদ ও ছাগল-ভেড়া লালনপালন করছেন। বসতবাড়ীর পতিত জমিতে সবজি ও ছাগল-ভেড়া পুশে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তা দিয়ে তাদের মৌসুমে সবজি চাষ করে প্রতিজন সংসারের খোরাক মিটিয়ে ১০/১২ হাজার টাকা আয় করছেন। আমরা প্রত্যেক নারীকে চাহিদানুযায়ী একটি করে ছাগল ও ভেড়া দেই। তা দিয়ে খামার তৈরি করেছেন। প্রত্যেকের এখন ৪/৫/৬টি করে ছাগল-ভেড়া হয়েছে। এ এলাকায় সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালনে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। অপর নারীরাও এতে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়া হোসেন ও উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো: ইউনুস আলী বলেন, ফ্রেন্ডশীপের উপরণাদির সদব্যবহারে সুবিধাভোগীদেরকে আধুনকি প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার পর তারা এখন সবজি ও পশু পালনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। লবণাক্ততা এলাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন নারীরা। এটা একটা আশার দিক, আমরাও জেনে খুব আনন্দিত হয়েছি। আমাদের প্রশিক্ষিতরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। সংসারের অভাব মোচন করতে পারছেন। তারপরও নতুন করে এগিয়ে আসা নারীদেরকেও আমরা প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদাণে প্রস্তুত রয়েছি।
সোনাইলতলার নারীরা এখন গোটা উপজেলার নারীদের কাছে দৃষ্টাস্ত স্বরুপ হয়ে উঠেছেন। সবজি ও পশু পালনে তাদের দেখাদেখি উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন অন্যান্য এলাকার নারীরা। তাদের এ কার্যক্রম দেখতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন আশপাশসহ দূরদুরান্তের নারীরাও। আর এ কর্মকান্ড দেখভাল করছে কৃষি ও প্রাণী সম্পদ দপ্তর।
উপজেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ দপ্তর জানায়, লবণ পানি অধ্যুষিত উপকূলীয় জনপদ মোংলা। এখানে এক সময়ে প্রচুর ফসলের চাষাবাদ হতো। প্রত্যেক বাড়ীঘরেই ছিলো গরু, মহিষ ও ছাগলের মত গবাদি পশু। বাড়ীর উঠানে হতো ধানসহ মৌসুমী ফসলের চাষাবাদ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ও ভূগর্ভস্ত পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় চাষাবাদ বিঘ্নিত হতে শুরু করে। এছাড়া এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় সেই গবাদি পশু ও ফসলের চাষাবাদ। এখন আর আগের মত মাঠে নেই ধান, বাড়ীর আঙ্গিনায় নেই সবজি ও গোয়ালে নেই গরু, ছাগল-ভেড়া। কিন্তু লবণ অধ্যুষিত এ এলাকার মানুষের দুর্বিসহ জীবনজীবিকার কথা চিন্তা করে মাঠে নামেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশীপ। উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ উলুবুনিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের তাদের দেয়া লবণ সহিঞ্চু উন্নতজাতের ফসলের বীজ ও ছাগল-ভেড়া পালনের উপরণাদি সহায়তায় তাতে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার গৃহিনীরা। কৃষি ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ এ সকল গৃহিনীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লবণ সহিঞ্চু শাকসবজি ও ভেড়া-ছাগল পালনে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১২০টি নারী পরিবার এখন মৌসুমি সবজি চাষে ও ভেড়া-ছাগল পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কোন ধরণের কীটনাশক ছাড়াই জৈব সার দিয়ে তারা শীতকালীন ও বর্ষাকালীন সবজি চাষ এবং সারা বছর ধরে গবাদি পশু পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাদের এ সফলতা দেখে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন আশপাশের নারীরাও।
উলুবুনিয়া গ্রামের সুবিধাভোগী মুক্তি রায় ও নওরোজ সুলতানা বলেন, আমরা ফ্রেন্ডশীপ থেকে প্রশিক্ষণ ও ১৫/১৬ প্রকার সবজি বীজ পেয়ে বাড়ীর পতিত জমিতে কৃষি করি। তা দিয়ে পরিবারে চাহিদা মিটিয়ে গত বর্ষা মৌসুমে ১০/১২ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেছি। এতে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। আর চলতি শীত মৌসুমের সবজি দিয়েও ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারবো। আগের চেয়ে আমরা এখন অনেক ভাল আছি, সবজি চাষ করে। ১৬ প্রকার সবজির মধ্যে রয়েছে লেটুস পাতাও। লবণাক্ত এলাকায় লেটুস পাতার চাষ করে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। এ দেখতে প্রতিদিন আশপাশের নারীরাও আসছেন। তাদের উদ্বৃত্ত বীজ দিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবেশী নারীদেরকেও। তাই ক্রমেই বাড়ছে সবজি চাষের প্রবণতাও।
একই এলাকার সুবিধাভোগী শিবানী মন্ডল ও হেনা বেগম বলেন, আগে সংসারে স্বচ্ছলতা ছিলনা। টাকা দিয়ে ছাগল-ভেড়া কেনার সামর্থ আমাদের ছিল না। কিন্তু ফ্রেন্ডশীপ আমাদের ছাগল-ভেড়া দিয়েছে। দুই বছরে তা লালনপালন করে ছাগল-ভেড়ার সংখ্যাও বেড়েছে। ছাগলের দুধ বিক্রি ও আমরা খেতে পারছি। এখন বাচ্চাসহ প্রত্যেকের ৪/৫টি তারও বেশি ছাগল-ভেড়া হয়েছে। পাশপাশি আমরাও এখন দুই একটি কিনতে পারছি। আমরা এখন ছোটখাটো খামারী হয়ে গেছি। আগের চেয়ে এখন আর্থিকভাবে অনেক ভাল আছি।
সোনাইলতলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মো: নওশের শেখ বলেন, লবণাক্ততার কারণে আমাদের এ এলাকায় আগে সবজি চাষ ও গরু, ছাগল-ভেড়া পালনের উপযোগী ছিলনা। কিন্তু ফ্রেন্ডশীপ সংস্থার এএসডি প্রকল্প দুই বছর ধরে কাজ করছে। তাতে এখানকার নারীরা কৃষি ও পশু পালনে প্রশিক্ষিত হয়েছে। ফলে তারা এখন সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালনে বিল্পব ঘটিয়েছেন। এখানকার নারীরা এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তাদের দেখা দেখি আশপাশের গ্রামের নারীরাও এখন এর উপর ঝুঁকছেন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশীপের এএসডি প্রকল্পে প্রজেক্ট অফিসার মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এ এলাকায় ঘুরে দেখি অতি লবণাক্ততার কারণে ফসল না হওয়ায় বাড়ীঘরের আঙ্গিনা কেউ কোন চাষাবাদ করেন না, এমনকি পশুও পালন করেন না। পরবর্তীতে এনিয়ে আমরা গবেষণা করে বিপল্প পদ্ধতি বের করে নারীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাই তাতেই ব্যাপক সফলতা এসেছে। এতে পরিবারের খাওয়ার খোরাক বাদেও মৌসুমে সবজি ও ভেড়া-ছাগল দিয়ে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। এখন তাদের ক্ষেত ভরা শাকসবজি আর গোয়ালে বাড়ছে গবাদি পশুর সংখ্যাও।
ফ্রেন্ডশীপ’র এএসডি প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় আমরা যখন কাজ করতে আসি তখন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। এটি লবণাক্ত এলাকা, এখানে লবণাক্ততার কারণে মানুষের চাষাবাদ বিশেষ করে সবজি চাষের জমি পতিত দেখা গেছে। হাঁস-মুরগি, ভেড়া-ছাগল পালন করতো না। তারা আর্থিকভাবে অনেকটা কষ্টের ভিতর জীবনযাপন করছিলো। তখন আমরা এ এলাকায় ১২০টি পরিবার নিয়ে ৪টি গ্রুপ করি। এ গ্রুপের সদস্যদের আমরা উদ্ভুদ্ধ করেছি, যদি আমরা বীজ সরবরাহ করি এবং আধুনকি পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিই। পরবর্তীতে তারা এগিয়ে আসায় উপজেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালনের প্রশিক্ষণ দিই। তারপর এখন বছরে দুইবার বর্ষা ও শীতকালে ১৫/১৬ প্রকার বীজ সরবরাহ করে থাকি। সেই বীজ দিয়ে তারা কীটনাশকমুক্ত জৈব সার দিয়ে সবজি চাষাবাদ ও ছাগল-ভেড়া লালনপালন করছেন। বসতবাড়ীর পতিত জমিতে সবজি ও ছাগল-ভেড়া পুশে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তা দিয়ে তাদের মৌসুমে সবজি চাষ করে প্রতিজন সংসারের খোরাক মিটিয়ে ১০/১২ হাজার টাকা আয় করছেন। আমরা প্রত্যেক নারীকে চাহিদানুযায়ী একটি করে ছাগল ও ভেড়া দেই। তা দিয়ে খামার তৈরি করেছেন। প্রত্যেকের এখন ৪/৫/৬টি করে ছাগল-ভেড়া হয়েছে। এ এলাকায় সবজি ও ছাগল-ভেড়া পালনে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। অপর নারীরাও এতে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়া হোসেন ও উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো: ইউনুস আলী বলেন, ফ্রেন্ডশীপের উপরণাদির সদব্যবহারে সুবিধাভোগীদেরকে আধুনকি প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার পর তারা এখন সবজি ও পশু পালনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। লবণাক্ততা এলাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন নারীরা। এটা একটা আশার দিক, আমরাও জেনে খুব আনন্দিত হয়েছি। আমাদের প্রশিক্ষিতরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। সংসারের অভাব মোচন করতে পারছেন। তারপরও নতুন করে এগিয়ে আসা নারীদেরকেও আমরা প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদাণে প্রস্তুত রয়েছি।
সোনাইলতলার নারীরা এখন গোটা উপজেলার নারীদের কাছে দৃষ্টাস্ত স্বরুপ হয়ে উঠেছেন। সবজি ও পশু পালনে তাদের দেখাদেখি উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন অন্যান্য এলাকার নারীরা। তাদের এ কার্যক্রম দেখতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন আশপাশসহ দূরদুরান্তের নারীরাও। আর এ কর্মকান্ড দেখভাল করছে কৃষি ও প্রাণী সম্পদ দপ্তর।