চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদীর বুকে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ বালুচর। যা বর্ষায় দুকূল ভাসিয়ে নেয় যমুনা। আর শুষ্ক মৌসুমে চরের চারিদিক ধু ধু করে। যমুনার বুকে জেগে ওঠা এসব বালুচরই এখন অবহেলিত মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাক্ষুসে যমুনার ভাঙাগড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা মানুষগুলো বালুচরে দীর্ঘদিন ধরে চিনা বাদামের চাষ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। সেই সঙ্গে ফিরে এসেছে তাদের সুদিন। তাই চরের কৃষক বাদামকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন চরের গুপ্তধন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যমুনা নদীর বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় বালুচর। আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল চাষ হচ্ছে চিনা বাদাম। সাদা বালুর জমিনে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা থোকা চিনা বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন।
ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা চরের কৃষক আজমত আলী বলেন, যমুনা চরের বালুমাটি চিনা বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর বাদাম চাষ করে অনেক লাভ হবে বলে আশা করছি। প্রতি মণ কাঁচা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৪শ থেকে ১৬শ টাকায় এবং প্রতিমণ শুকনো বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৮শ থেকে ২২শ টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদামের ফলনও হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
আরেক কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, বালু মাটিতে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে বাদামের মতো লাভ হয় না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে চিনা বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরাঞ্চলের আমরা সবাই বাদাম চাষ করেছি। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলে মতো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ক বাদাম উঠানোর লেবার খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। বালুচরের এ ফসলটি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রধান অবলম্বন।
জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, চলতি বছর বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় আশা করছি। গোপালপুর, ভূঞাপুর ও নাগরপুর উপজেলায় প্রায় এক হাজার কৃষক লাভের মুখ দেখবেন। চলতি মৌসুমে বাদামের ভালো ফলনের পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। বাদাম আবাদে সেচ, সার ও শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা দিন দিন বাদাম আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো। টাঙ্গাইলে এবার দুই হাজার ২৭২ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন।