নাফি উজ জামান পিয়াল, যশোর প্রতিনিধি : গায়ে হলুদের সাজে এক নারী মোটরবাইক চালাচ্ছেন। তার পিছনে একই রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত একদল যুবক-যুবতী। শহরের রাস্তায় মোটর শোভাযাত্রা। এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। ভাইরাল সেই ছবির মেয়েটি যশোরের মেয়ে ফারহানা আফরোজ। গত ১৩ আগস্ট নিজের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের ছবি তোলার পোজ দিতে গিয়েই এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেন। যা যশোরের প্রেক্ষাপটে একেবারেই ব্যতিক্রমী ঘটনা।
১৪ আগস্ট পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা হাসনাইন রাফির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন যশোর শহরের সার্কিট হাউজ এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারহানা আফরোজ। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফি ঢাকার গাজীপুরে কর্মরত আছেন।
ফারহানা আফরোজ বলেন, ঢাকাতে বাইক চালিয়ে নারীদের গায়ে হলুদের এন্ট্রি (ছবি তোলার পোজ) দেওয়া কমন ব্যাপার। আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারি, তাই ভাবলাম গায়ে হলুদের দিন পার্লার থেকে বেরিয়ে বাইকেই এন্ট্রি দিবো। সেই হিসেবে বাইকেই এন্ট্রি দিলাম। ভিডিও ধারণ, ছবি তোলা হলো। শহর ঘুরলাম। সাথে ছিল বন্ধু, বান্ধব, স্বজনরা। তাদের গায়েও একই রঙের পাঞ্জাবি ছিল। যশোরের প্রেক্ষাপটে ব্যতিক্রমী ছিল। মূলত ব্যতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকেই এমন আয়োজন করেছি।’
ফারহানা আফরোজের বাড়ি যশোর সার্কিট হাউজের সামনে। যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে
এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এখন তিনি ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে এইচআর’এ এমবিএ করছেন।
ফারহানা আফরোজ এমন ব্যতীক্রমী চিন্তা চেনতার বিরূপ প্রভাব ফেলে যশোরবাসীর উপর। শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে এখন এটা নিয়েই আলোচনা চলছে। কয়েকজন লোকের সাথে কথা হলে তারা জানায়, বিয়ে একটি সামাজিক কাজ। কিন্তু অতি উতসাহি কিছু পরিবার সামাজিক চিন্তাভাবনা না করেই নিজেদের ইচ্ছা মতো বিভিন্ন কর্মকান্ড করে থাকেন।
শহরের দড়াটায় মাসুম নামের একজনের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, সামাজিকতা মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনা করা উচিৎ । কিন্তু বর্তমান যে করোনা পরিস্থিতি সেই সময় এমন জাকজমকপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং শহরের ভিতরে মটোরসাইকেল নিয়ে যে শোডাউন করা হয়েছে তা মোটেও কাম্য নয়।
ফারহানা আফরোজের যে মোটরসাইকেল শোডাউন দেখা গেছে সেখানে দেখা যায় অনেক গুলো মটোরসাইকেল
একসাথে নিয়ে শহরের বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক প্রদক্ষিণ করতে । যেখানে কারো মাথায় হেলমেট ছিল না তার সাথে ছিল বেপরয়াভাবে গাড়ি চালানো। বেপরয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য কিছু কিছু জায়গায় সৃষ্টি হয় ট্রাফিক জ্যামের।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একজন রিক্সা চালকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সেদিন যখন তারা মোটরসাইকেল শো ডাউন করছিল তখন তিনি রিক্সা চালাচ্ছিলেন কিন্তু তাদের বেপরয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য অল্পের জন্য এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা পান।
এ ব্যাপারে শহরের কিছু উচ্চ মহলের লোকেদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, বর্তমান করোনার মধ্যে যখন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন এত কঠোর অবস্থানে সেখানে তারা এমন একটি কাজ কিভাবে করলো তা তাদের জানা নেই, যদিও ফারহানা আফরোজ জানায় তারা তাদের অনুষ্ঠানের জন্য থানা থেকে অনুমতি নিয়েছেন।