চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃভৈরব নদ খননের নামে ব্যক্তি মালিকানার জমি দখলের প্রতিবাদে যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত জমি হারানো মালিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে এলাকার কয়েকশ ভুক্তোভোগী কৃষক তাদের চাষযোগ্য জমি ফিরে পেতে মানববন্ধনে অংশ নেন।
যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদে ছোট-বড় জাহাজ চলত, ব্যবসা-বাণিজ্যে যার অবদান ছিল অপরিসীম। নদটি সারাবছর পানিতে ভরপুর থাকত; যার ফলে এলাকার মানুষের মাছের চাহিদাও পূরণ হতো। কিন্তু নদটি এক সময় মরে বেদখল হয়ে যায়।
তাই যশোর এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ খনন করে পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনা। তাই এলাকার মানুষের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে বর্তমান সরকার নদটি খননের উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন কাজ সম্পন্ন করে। ভৈরব নদ খনন পরবর্তী নদের দুই পাড়ে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষকদের সিএস, এসএ, এবং আরএস রেকর্ড ধরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড দখলে বৃক্ষরোপণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
ভৈরব নদ খননের নামে মালিকানা জমি দখলের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, কাশিমপুর ও হৈবতপুরের বিভিন্ন গ্রামের জমি হারানো শত শত জমির মালিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন। প্রতিবাদ সভায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ ভুক্তভোগীরা বক্তব্য দেন।
এলাকার উন্নয়নকর্মী ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি কুদ্দুস ছালাম বলেন, এলাকার উন্নয়নে আমরা ভৈরব নদ খননকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা বুঝিনি এই নদ খনন আমাদের জমি কেড়ে নেবে। এই খননের ফলে অনেকে জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। জমির মালিকানার সব কাগজ থাকার পর তারা কিছু করতে পারছে না। অতিসত্তর সরকার যদি বিষয়টির সুরাহা না করে তবে আমরা জমি ফিরে পেতে দরকার হলে হাইকোর্টে দ্বারস্থ হব।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী কৃষকরা আরও জানান, যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, বিজয়নগর, ঘোনা, খোজারহাট, মিরাপুর, দৌলাতদিহি, হৈবতপুর, আব্দুলপুর ও পোলতাডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের শত শত কৃষকের আবাদি জমি নদী খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড দখল করে সেখানে গাছ লাগিয়েছে। ফলে জমি হারিয়ে এসব কৃষকরা অসহায়ের মতো দিনযাপন করছেন।
তারা জানান, ভৈরব নদীর পাশ দিয়ে এসব গ্রামের কৃষকদের সিএস, এসএ এবং আরএস রেকর্ডভুক্ত জমির মালিক। ভৈরব নদী খননের পূর্বে এসব জমিতে কৃষকরা ধান, গম, ছোলা, খেসারি, মুগ, মুশরী ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতেন। কিন্তু নদী খননের সময় নদীর পাড়ের মাটি অনেক দূরত্বে কৃষকের জমিতে রাখে এবং নদীর পাড় থেকে অনেক দূরে নিয়ে মাটির স্তূপ করা হয়। পরবর্তীকালে ওই স্তূপের ওপরেই অর্থাৎ মালিকানা জায়গায় বৃক্ষরোপণ করে। ফলে কৃষকের চাষযোগ্য জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে গত ৬ নভেম্বর যশোর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দাখিল ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর ম্মারকলিপি দেওয়া হয়। যার অনুলিপি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), যশোর, যশোর পুলিশ সুপার ও যশোর কোতয়ালী ওসি বরাবর প্রেরণ করা হয়।
তারা আরও জানান, জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দাখিলের সময় জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও অদ্যবধি বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে বৃহম্পতিবার সকালে এসব এলাকার কয়েকশ ভুক্তোভোগী কৃষক চাষযোগ্য জমি ফিরে পাবার দাবিতে দৌলাতদিহি ব্রিজের নিচে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দখলকৃত জমি ফিরে পেতে জেলা প্রশাসকের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।