আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আমার সঙ্গে নাই, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নাই, নোয়াখালী জেলা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, বসুরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নাই। ডিসি-এসপি আমার সঙ্গে নাই। তবে আমার সঙ্গে জনগণ আছে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন- আমি অসুস্থ মরে যাব, এ কথাগুলো শুনলে আমি দুর্বল হয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, তোদের ওপর আল্লাহর গজব পড়ুক- কেন্দ্র (আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) থেকে এ পর্যন্ত যারা এসব ষড়যন্ত্রে মেতে আছে।
রোববার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ৯নং ওয়ার্ড হাজীপাড়ায় এক পথসভায় আবদুল কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চারদিকে বারুদের গন্ধ পাই, অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনি, যে কোনো সময় আমার জীবন বিপন্ন হতে পারে। আপনারা আমাকে কবর দিয়ে আসবেন।
আবদুল কাদের বলেন, পত্রপত্রিকা আসলগুলো লেখে না, এডিট করে আমার কথা বিকৃত করে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কিছু নেতা সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে এসব বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করে। এগুলো আবার প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের মন্ত্রীর (ওবায়দুল কাদের) কাছে পাঠিয়ে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ১৫ আনা মানুষ আমার প্রশংসা করে আর এক আনা মানুষ আমার সমালোচনা করে। আমি নির্বাচনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন আমি সবার ঘরে ঘরে গেছি। আর কেউই যায়নি। এখন আমার সঙ্গে যারা ভোটযুদ্ধে আছে, তারা কেউ কী মানুষের কাছে গেছে। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে? আমি মানুষের জন্য করেছি, ভবিষ্যতেও করার মানসিকতা আছে। এখন যদি আপনারা আমাকে ফেলে দেন, তবে আমার কিছুই করার নেই।
কাদের মির্জা আরও বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে পাগল ও উন্মাদ বলেছেন, তিনি গোপালগঞ্জের এমপি। যেখানে ৯৯ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ করেন। তিনি তো নিজের যোগ্যতায় এমপি হননি, আওয়ামী লীগ করেন সেই কারণে এমপি হয়েছেন। তিনি আগে মন্ত্রী ছিলেন এবার মন্ত্রীও হতে পারেননি, কেন বাদ পড়েছেন? দায়িত্বশীল নেতাদের উচিত খবর নিয়ে কথা বলা।
তিনি বলেন, আরেক নেতা কুষ্টিয়ার, তিনি আমার দায়িত্বশীলতার ঘাটতি দেখেন। আমি তো ৪৭ বছর ধরে রাজনীতি করি। সব কাজ সঠিক করি তা বলতে পারব না। আপনি তো কেন্দ্রীয় নেতা, কুষ্টিয়াতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে, কী দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন আপনার দায়িত্বশীলতা কোথায় গেছে।
তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম বাটু নামে একজন টকশোতে বলেন, জামায়াত-বিএনপির ভোট পাওয়ার জন্য পরাজয়ের ভয়ে মির্জা এসব বলছেন। ভাগ্য ভালো আপনি এমপি হয়েছেন, আমার হয়তো সে ভাগ্য এখনও হয়নি।
আবদুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স নামাজ-রোজার ধার-ধারে না। মানুষ অনেক কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদার। নুরা পাগলার (ভিপি নুর) সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। সারা দেশে কোনো জনসমর্থন নেই তাদের। আমার পথসভার সমান সমর্থনও নেই সারা দেশে। তারপরও কেন যেন টিভিওয়ালারা এদের মতো লোকদের ডাকে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে আগামীতে জিততে হলে আরও সতর্ক হতে হবে। নিজের বউকে সামলাতে হবে। সঙ্গে যারা চলে, তাদের ওপর নজর রাখতে হবে, কে কোথায় থেকে মাসোহারা নেয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন বলেছেন, সেই চাকরি এখন কোথায়? এ কথা বললে আমি পাগল, উন্মাদ। ‘শরম যদি লাগে গো…ঘোমটা দিয়ে চল গো’ বলে একটা ছন্দ বলেন মির্জা। কাদের সাহেব আমাকে এগোতে দেননি। ঢাকায় ভর্তি হতে গেলে তিনি আমাকে চট্টগ্রাম ভর্তি হতে বলেন। ঢাকায় ভর্তি হলে যদি আমি বড় নেতা হয়ে যাই।
আবদুল কাদের বলেন, নোয়াখালীতে একরাম চৌধুরী, ফেনীতে নিজাম হাজারী ফেয়ার ভোটে জামানত পেলে আমি হিজরত করে এ দেশ ছেড়ে চলে যাব। আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সততা ও উন্নয়নের জন্য নির্বাচনে জিতবে। তার ওপরও আমার ক্ষোভ আছে। এখান থেকে ভোট নিতে হলে কথা আছে। ৭৫-এর পর কবিরহাটেও আমি রাজনীতি করি। হাজার হাজার কর্মী আমার আছে। ওরা কিছুই পায় না, ওদের কান্না আমার সহ্য হয় না। কোম্পানীগঞ্জে জিততে হলেও আমাদের লাগবে। শামীম নেতা, আইয়ুব নেতা, ওমুক নেতা-তমুক নেতা- তাদের দিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের নেতাকে (ওবায়দুল কাদের) সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, নোয়াখালীর ডিসির মুখে এমপি একরাম চৌধুরীর মাস্ক। আমি যদি সত্য না বলি, আল্লাহর গজব আমার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ুক। ডিসি নিরপেক্ষ নয়, প্রশাসনের বড়-বড়রা সব বেচা (বিক্রি) হয়ে গেছে। এরা আমার সঙ্গে নানান নাটক করছে।