প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে দুটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। এর একটি পেতে পারে বাংলাদেশ। স্বভাবতই ‘কোভিশিল্ড’ ও ‘কোভ্যাক্সিন’ কারা পাবেন, কীভাবে ও কখন পাওয়া যাবে, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা-এ নিয়ে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ভ্যাকসিনগুলো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে কবে, কীভাবে পৌঁছবে? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে একটি ভিডিও টুইট করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি সম্পর্কে প্রায় সব জিজ্ঞাসার উত্তর মিলবে।
ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ভিডিওতে এইমস-এর পরিচালক রণদীপ গুলেরিয়া এ কর্মসূচির পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। পাশাপাশি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সম্বন্ধে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।
গণ ভ্যাকসিনেশন কবে শুরু?
আগামী ১৬ জানুয়ারি ভারতজুড়ে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের উচ্চপর্যায়ের দল করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে এ কর্মসূচির বিস্তারিত কার্যক্রম চূড়ান্ত করেছে।
কারা পাবেন?
সারাদেশে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীরা ভ্যাকসিন পাবেন। এরপর ৫০ বছরের ওপরে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীরা তা পাবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর কাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে তা কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
ভ্যাকসিন নেয়া কী বাধ্যতামূলক?
করোনা ভ্যাকসিন নেয়া ঐচ্ছিক। তবে তা নিতে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
কয় ডোজ নিতে হবে? সময়ের ব্যবধান কত?
দুই ডোজ নিতে হবে। এর মধ্যে ২৮ দিনের ব্যবধান থাকবে। ভ্যাকসিন নেয়া সবার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
কখন অ্যান্টিবডি তৈরি হবে?
সাধারণত, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দুই সপ্তাহ পর দেহে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডির প্রকাশ ঘটে।
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী?
মূলত ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো শরীরে হালকা জ্বর এবং ব্যথা হওয়া। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এটি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
কীভাবে ভ্যাকসিন দুটি নির্বাচন হয়?
ভ্যাকসিন দুটির ক্লিনিক্যাল ডেটা পরীক্ষা করেছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। এরপর জরুরি ভিত্তিতে জনগণকে ব্যবহারের জন্য কোম্পানিগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে তারা।
কতটা নিরাপদ?
অনুমোদিত ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ কার্যকর ও নিরাপদ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে কেউ নেয়ার পর ডোজ পূরণ করা উচিত। এতে সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
কীভাবে জানতে পারবেন?
প্রাথমিক পর্যায়ে টার্গেট গ্রুপকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। নির্বাচিত প্রার্থীরা মোবাইলে মেসেজ পাবেন। তাদের ভ্যাকসিন কেন্দ্র এবং সময় সম্পর্কে অবহিত করা হবে। রেজিস্ট্রেশনে যাতে কোনও ঝামেলা না হয়, সেজন্য এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কী নেয়া যাবে?
না, ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক।
কোন কোন ডকুমেন্ট দরকার?
ভ্যাকসিন নেয়ার রেজিস্ট্রেশনের সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্বাস্থ্য বীমা স্মার্ট কার্ড, প্যান কার্ড, পাসবুক, পাসপোর্ট, সার্ভিস আইডি কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখাতে হবে।
আপডেট কী পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার পর মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিটি তথ্য দেয়া হবে। যেমন-দ্বিতীয় ভ্যাকসিন কবে, কখন, কীভাবে, কোথায় দেয়া হবে-সব কিউআর (QR) কোড ভিত্তিক প্রশংসাপত্র পাওয়া যাবে।
করোনা পজিটিভ ব্যক্তি কী নিতে পারবে?
যারা ভাইরাস পজিটিভ, তারা ভ্যাকসিন কেন্দ্রে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। ফলে তাদের ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। শরীর থেকে লক্ষণ দূর হলে তা পাবেন।
সেরে ওঠা ব্যক্তির কী নেয়া প্রয়োজন?
অবশ্যই, ভ্যাকসিনের ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে। সেটা গ্রহণ করা দেহে আরও ভালো প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করবে।
ক্যান্সার, সুগার ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিরা কী নিতে পারবে?
গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ভ্যাকসিন নেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি জানা জরুরি, ওষুধ খাওয়ার ফলে ভ্যাকসিনের কোনও প্রভাব পড়বে না।
কেন্দ্রে কী অনুসরণ করতে হবে?
ভ্যাকসিন নেয়ার পর আধ-এক ঘণ্টা কেন্দ্রে বিশ্রাম নিতে হবে। যদি কোনও সমস্যা মনে হয়, তাহলে অবিলম্বে সেটি কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জানাতে হবে।