বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় নির্মিত ৫ টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫৮০ টি পরিবারের সদস্যরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগণ আশ্বাসের পরে আশ্বাস দিলেও গত দেড় যুগেও ভাগ্য ফেরেনি হতদরিদ্র ওইসব বাসিন্দাদের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে নতুন করে আশাজাগানিয়া সুখবর দিলেন রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন।
সরোজমিনে বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় ঘুরে হতদরিদ্র ওইসব বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুপেয় পানির সমস্যা, স্যানিটেশনের সমস্যা ও আবাসনের সমস্যাই তাদের বড় সমস্যা। উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের কণ্যাডুবির মরা পশুর নদীর চরে ২০০৯ নির্মিত হয় ২২ টি ব্যারাক নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২২০ টি হতদরিদ্র পরিবারের ঠাঁই মেলে ওইসব ঘরে। ওখানের বাসিন্দা উজির উদ্দিন জানান, অনেক দিন ধরে ঘরগুলো ভেঙ্গে গেছে। বসবাস করা যাচ্ছে না। পায়খানার স্থান পুরোপুরি নষ্ট। খাবার পানি নেই। পুকুরের ঘাট নেই। একই কথা বলেন, আবেদা বেগম, হোসনেয়ারাসহ অনেকে। এলাকার চেয়ারম্যান রাজীব সরদার জানান, আমরা সমস্যার সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের স্মরণাপন্ন হয়েছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
সরোজমিন গিয়ে পেড়িখালী ইউনিয়নের সিকিরডাঙ্গা-১ ও সিকিরডাঙ্গা-২ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সাথে কথা হয়। এখানের বাসিন্দা বাচ্চু গাজী ও জয়নব বেগম জানান, ৬ বছর পূর্বে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা তাদের ব্যারাকটি ভষ্মিভূত হয়। সরকারিভাবে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। এরপর আর কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এখানের বাসিন্দা ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের (১,২ ও ৩) সদস্যা জয়া বেগম, জানান, এখানের ২ টি ফেজে ১২০ টি ও ১৬০ টি পরিবার ঘরে বরাদ্দ পেয়েছেন। ২২ বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি। আমাদের থাকার জায়গা থাকলেও বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। স্যানিটেশন ও পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিশুদ্ধ পানির প্লান্ট স্থাপন করা হলেও সেটি টেকসই হয়নি। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য কোন পানির ট্যাংকি ও পাইনি। সবাই খুব মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সরজমিন উপজেলার বাঁশতলী। এখানে ৮০ টি পরিবার বাস করেন। তাদের ও একই সমস্যা। বাঁশতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল জানান, আমরা উপজেলা সমন্বয় সভায় এ সমস্যা সমাধানের জন্য কথা বলেছি। সম্মানিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের আস্বস্ত করেছেন। শীগ্রই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মো. আবু সাইদ জানান, আমি ইউপি চেয়ারম্যান ও পরে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা কালীন সময়ে হতদরিদ্র ওইসব বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক চেষ্টা করছি। আমাদের দাবী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় দৃষ্টি দিয়ে জরুরীভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যার সমাধান করবেন।
এ বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলনের নেতা এ্যডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ জানান, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ও তীব্র লবনাক্ত আবহাওয়ার কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো দ্রুত মরিচা ধরে নষ্ট হয়েছে। আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আরও বেশি সমস্যা হয়েছে। এগুলো এখন থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নতুন করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য ঘর নির্মাণের দাবী জানান এ নেতা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে এমন তথ্য জানতে চাওয়া হয় রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন এর কাছে। তিনি বলেন, আমি এ উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই উপজেলাবাসীর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। সরকারের বরাদ্দ যাতে সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় সেদিকে সর্বক্ষণ দৃষ্টি রেখে কাজ করছি। এর ধারাবাহিকতায় বিগত বিভিন্ন সময়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প গুলো পরিদর্শন করেছি। ওইসব বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছি। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। তারা যাতে পূর্বের মতো ভালো থাকতে পারেন সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র পাঠানো হয়েছে। আশার কথা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল বাসিন্দাদের জন্য সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ দিচ্ছেন। আশা করি খুব শিগ্রই সকল বাসিন্দাদের শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশনের সমাধান হবে। এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।