চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃরাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জনসভা। গতকাল রবিবার চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ নভেম্বর খালিশপুরে জনসভা। গতকাল চট্টগ্রামের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আমিন জুট মিলের সিবিএ সভাপতি আরিফুজ্জামান। বক্তৃতা করেন হারুন অর রশিদ খান, মোঃ আলাউদ্দিন, শাহানা শারমিন, মোঃ বেলাল হোসেন মল্লিক, শফিকুল ইসলাম, আবু দাউদ মোঃ দ্বীন ইসলাম, মোঃ হুমায়ুন কবির খান ও আবু হানিফ প্রমুখ।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির খান জানান, শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও চিকিৎসার ব্যয় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে রবিবার চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর খালিশপুর পিপলস গোল চত্বরে জনসভা।
তিনি বলেন, জনসভা শেষে সারাদেশের সিবিএ নেতারা বসে ২ নভেম্বর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
পাটকল শ্রমিক নেতারা জানায়, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রি-পক্ষীয় সভার সর্বসম্মতিক্রমে এবং সচিব বিজেএমসির পক্ষ থেকে সকল মিলের প্রকল্প প্রধান বরাবরে জাতীয় মজুরী স্কেল, ২০১৫ এর চূড়ান্ত ফিক্সেশন সম্পন্ন করে ১৮ মে’র মধ্যে শ্রমিকদের অনুকুলে নতুন মজুরি স্কেলে পে-স্লিপ প্রদান করার নির্দেশনা থাকার সত্ত্বেও এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৬ মে ও ১৬ এপ্রিল পত্র প্রেরণ করার পরও জাতীয় মজুরি স্কেল বাস্তবায়নে নানান গড়িমসির মাধ্যমে বিলম্বিত করা হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে জাতীয় মজুরি স্কেল, ২০১০ অনুযায়ী শ্রমিকেরা যে মজুরি পাচ্ছে তা দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্মচারীদের ৩-৪ মাসের বেতন এবং শ্রমিকদের ৮/৯ সপ্তাহের মজুরী বকেয়া পড়েছে। একই সাথে অদক্ষ অনভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদের ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টির কারণে মিলের উৎপাদিত পাটপণ্যের মজুদ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে অবিক্রিত আনুমানিক মজুত দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৭১৪.১৯ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক মূল্য ৬৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বকেয়া বেতন ও মজুরি ৯৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গ্রাচ্যুইটি বকেয়া ২০১৩-১৪ থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৫০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে এবং জীবিত অবস্থায় যাদের নমিনী করে গেছেন তাদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে পাট মৌসুম ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পাটক্রয়ের বিষয়ে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে মানসম্মত বাজেট উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বিজেএমসির মিল সমূহ ধীরে ধীরে ক্রেতা শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
বিজেএমসির খুলনার সমন্বয়ক মোঃ বনিজ উদ্দিন মিয়া জানান, শ্রমিকদের মজুরি ও বকেয়ার বিষয়ে বিজেএমসিকে অবহিত করা হয়েছে। মিলে আর্থিক সংকটের কারণে পাটক্রয় করা যাচ্ছে না। একই সাথে মজুরি বকেয়া পড়ছে। ৯টি পাটকলে প্রায় ২১৬ কোটি টাকার উৎপাদিত পাটপণ্য মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে খুলনা অঞ্চলের নয়টি জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক, উপ-মহাব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক, প্রকল্প প্রধান ও খুলনা শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। পাটকলগুলোর সার্বিক সমস্যা, পাটক্রয়ে অর্থসংকট, ব্যবসায়ীদের কাছে দেনা, মজুরি ও বেতন বকেয়া, গ্রাচ্যুইটি, পিএফ, মজুরি কমিশনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সবকিছু শুনে তিনি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।