চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর ও গোপনীয় তথ্য ভারতে পাচারের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্য দেবপ্রসাদ সাহার গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা সদরের সাহাপাড়ায়। গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল তথ্য পাচারকারী চক্রের সদস্য দেব প্রসাদকে ঘিরে চলছে নানা গুঞ্জন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে অনেক ধরনের জল্পনা কল্পনা। তেরখাদার মানুষের মধ্যে এখন হাজারও কৌতূহলী প্রশ্ন-দেব প্রসাদ সাহাকে ঘিরে। গত মঙ্গলবার দেব প্রসাদ সাহাকে গ্রেফতারের পর যশোরের আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হুসাইন আজ বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির দিন নির্ধারণ করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এদিকে দেব প্রসাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। বাংলাদেশে ও ভারতে দেব প্রসাদ ও তার ভাইদের রয়েছে অঢেল সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, যশোরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ব্যবসার পাশাপাশি নওয়াপাড়ায় পাথরের ব্যবসা রয়েছে তার। সম্প্রতি যশোরে ৬০ লাখ টাকায় একটি বাড়ী কিনেছেন তিনি। অন্যদিকে তেরখাদা সদরের সাহাপাড়ায় বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, দেব প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাসে চারচালার অতি সাধারণ টিনশেড ঘর। টিনের চাল ও বেড়ায় জং ধরেছে। বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার চতুর্থ ভাই অচিন্ত্য সাহার খুলনা শহরের বড় বাজারে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেশী-বিদেশী নানা রকমের পণ্যের ব্যবসায়ী তিনি। গতকাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেব প্রসাদ সাহার এ খবর জানতে পেরেছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতার পুলিশ সদস্য দেব প্রসাদ সাহা খুলনার তেরখাদা উপজেলা সদরের মৃত সুরেন্দ্রনাথ সাহার পুত্র। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সকলের ছোট। পাঁচ ভাইয়ের বড় ভাই গৌরপদ সাহা, প্রভাষ সাহা ও মেঘনাথ সাহা এই তিন ভাই প্রায় দুই যুগ আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত জেলার হাওড়া এলাকায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেছেন। বড় ভাই গৌরপদ সাহা ও প্রভাষ সাহা সেদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আর সেঝো ভাই মেঘনাথ সাহার বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় আলিশান বাড়ি তাদের। মূলত সেঝো ভাই মেঘনাথ সাহার সাথেই ভারত-বাংলাদেশে অবৈধ ব্যবসার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেব প্রসাদ সাহার। মাদকদ্রব্য ও ওষুধপত্রসহ ভারতীয় পণ্যদ্রব্য দেশে এনে উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য রয়েছে নিজস্ব বলয় রয়েছে দেব প্রসাদ সাহার। এ বিষয়ে (বুধবার বিকেল ৫টায় মুঠোফোনে) দেব প্রসাদের ভাই অচিন্ত্য সাহা বলেন, ‘দেবপ্রসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। কিভাবে কি হলো; কিছুই বুঝতে পারছি না।’ ব্যক্তিগত জীবনে দেবপ্রসাদ এক ছেলে ও একটি কন্যা সন্তানের জনক।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার পুলিশ সদস্য দেবপ্রসাদ সাহা (কং নং-৭০৩) ঢাকার উত্তরা ১নং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কনস্টেবল। সেই সুবাদে ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কর্মরত থাকাবস্থায় ভারতের অনেকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যে কারণে তিনি যখন তখন নোম্যানস ল্যান্ড অতিক্রম করে ভারতে যাওয়া আসা করতেন। ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালনকালে বিশেষ বাগিণীর দু’জনের সাথে তার পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা দু’জন বেনাপোলে মাঝে মধ্যে এসে ভারতের এস চক্রবর্তী ও পিন্টু’র কাছে বাংলাদেশের গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি পেনড্রাইভ নোম্যানস ল্যান্ড পার হয়ে ভারতে পাচার করে দেব প্রসাদ সাহা। ১৫ দিন পর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত পেনড্রাইভ ভারতের এস চক্রবর্তী ও পিন্টুর কাছে হস্তান্তর করে দেব প্রসাদ সাহা। গত ২৫ অক্টোবর ঢাকার কমলাপুরের একটি হোটেল থেকে র্যাবের হাতে আটক হন সৈনিক শাহানেওয়াজ শাহিন। এ সময় তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পেনড্রাইভও উদ্ধার হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতের কাছে বাংলাদেশের তথ্য পাচারের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এরপর বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অনুসন্ধানে নামে। তদন্তে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও ভারতের একজন পুলিশ সুপারের সাথে কথোপকথনের ভিডিও সিডি’র মাধ্যমে ভারতে বাংলাদেশের তথ্য পাচারের বিষয়টি উঠে আসে।
বেনাপোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মামুন খান জানান, ভারতে বাংলাদেশের তথ্য পাচারের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দেব প্রসাদকে গ্রেফতারের পর ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনার সাথে আরও কে কে জড়িত রয়েছে, তা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।