টিকিট ছাড়াই পাবনা থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে উঠা তিন যাত্রীর কাছ থেকে রেলওয়ের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করায় একজন টিটিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয়’ পরিচয়ে বিনা টিকিটের তিন ট্রেন যাত্রীর সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ করার দায়ে ঈশ্বরদীর ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক বা টিটি’ শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
রেলমন্ত্রীর আত্মীয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে টিটি শফিকুলকে মোবাইল ফোনে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ জানানো হয়। পরদিন শুক্রবার (৬ মে) থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া টিটি শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন স্টেশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত। ঘটনার রাতে টিটি শফিকুল ইসলাম ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত ছিলেন। আবার ট্রেনে দায়িত্বরত অবস্থায়ই তিনি বরখাস্তের আদেশটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন।
টিটি শফিকুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করা ওই তিন যাত্রীর কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। পরে তাদের এসি কামরা থেকে শোভন কামরার টিকিট দেওয়া হয়। এই অপরাধেই আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
রেলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫ মে দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। এসময় ট্রেনের দায়িত্বরত টিটি শফিকুল ইসলাম তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটি বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) নুরুল আলমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন। এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটি শফিকুল ওই তিন ট্রেন যাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১০৫০ টাকায় জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট বানিয়ে দেন। এসময় ট্রেনে দায়িত্বরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’করার অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।
বরখাস্ত আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেড কোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরতুল্লাহ আলামিন মোবাইর ফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন। সেসময় তিনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন বলেন, জরিমানা করার জন্য তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। রেলের দায়িত্ব যাত্রীসেবা দেওয়া, যাত্রীদের হয়রানি করা নয়। তার বিরুদ্ধে তিন যাত্রীকে হয়রানি করা এবং তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার অভিযোগ পাওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। তিনি যথাযথ জবাব দিতে পারলে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হতে পারে। এটা রেলওয়ের নিয়মিত প্রক্রিয়া।
ঘটনা সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম জানান, বরখাস্তের বিষয়টি আমি ট্রেনে দায়িত্বরত অবস্থায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এ কারণে শুক্রবার থেকে কাজে যাওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ঈশ্বরদী থেকে অল্প বয়সী তিন ট্রেন যাত্রী রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি কেবিনে উঠেন। মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় আমি সম্মান দেখিয়ে এসিও স্যারের পরামর্শে এসির টিকিট না কেটে সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের বানিয়ে দেই। আমি তাদের সঙ্গে কোনোরকম অসদাচরণ করিনি।