বিশ্বকাপ ও ইউরো মিলিয়ে গত পাঁচটি বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ জিততে পারেনি পর্তুগাল। হাঙ্গেরির গোছানো রক্ষণভাগ দেখে আশঙ্কা জাগছিল, হয়তো আবারও একই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে গত আসরের চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু না, শেষ আট মিনিটে গুনে গুনে তিন গোল করলো তারা। জোড়া গোল করার পথে ইউরোর সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা হলেন বিরতির আগে ক্রসবারের উপর দিয়ে বল পাঠানো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বুদাপেস্টে ৬০ হাজারেরও বেশি দর্শককে নিস্তব্ধ করে ৩-০ গোলে হাঙ্গেরিকে হারালো পর্তুগাল।
পুর্তগালের বড় জয়ের এই রাতে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে গোলের নতুন রেকর্ড গড়েছেন রোনালদো। ইউরোতে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক এখন তিনি। সব মিলিয়ে তার গোলসংখ্যা ১১। টপকে গেছেন তিনি এর আগে সর্বোচ্চ গোল তালিকার শীর্ষে থাকা মিচেল প্লাতিনিকে।
ইউরোতে ৯ গোলের রেকর্ড নিয়ে এতদিন প্লাতিনি ছিলেন শীর্ষে। হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচে দুই গোল করে রোনালদো এখন টপলিস্টে। এর আগে একাদশে নাম লেখানোর সঙ্গে সঙ্গে দুটি রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পঞ্চম ইউরো খেলছেন তিনি, আর যে কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এটি ছিল তার ৩৯তম ম্যাচ। তাতে জার্মানির বাস্তেইন শোয়েনস্টেইগারকে (৩৮) পেছনে ফেলে সবার উপরে তিনি।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল পর্তুগাল। কিন্তু গোলমুখ খুলতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮৪ মিনিট পর্যন্ত। আর শেষ রক্ষা হয়নি হাঙ্গেরির। গোটা ম্যাচ জমাট রক্ষণ দিয়ে পর্তুগিজদের ব্যর্থ করা দলটি আরো দুই গোল খায় স্বাগতিকরা।
প্রথম সুযোগ পর্তুগাল তৈরি করেছিল ৫ মিনিটে। ডিওগো জোতা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার আত্তিলা সালাইকে কাটিয়ে বক্সের প্রান্ত থেকে শট নেন। হাঙ্গেরি গোলকিপার পিটার গুলাকসি দারুণ সেভে তাকে ব্যর্থ করেন। ১৯ মিনিটে তিনি রোনালদোর মুখোমুখি হওয়ার পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হন তাকে রুখে দিয়ে, যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজান লাইন্সম্যান।
ম্যাচ ঘড়ির কাঁটা ৩০ মিনিটে যেতে বার্নার্দো সিলভার ক্রস থেকে রোনালদোর হেড গোলবারের পাশ কাটিয়ে যায়। এর সাত মিনিট পর হাঙ্গেরি প্রথমার্ধের একমাত্র সুযোগ পায়। আন্দ্রাস স্কাফারের বাঁকানো ফ্রি কিকে অ্যাডাম সালাই উঁচুতে উঠে ফ্লিক করেন। কিন্তু তা সোজা চলে যায় পর্তুগিজ গোলকিপার রুই প্যাট্রিসিওর হাতে।
৪০ মিনিটে জোতা আরো একবার সুযোগ নষ্ট করেন। সেমেদো ও সিলভার বানিয়ে দেওয়া বলে কাছের পোস্টে রিসিভ করেন এবং সালাইকে কাটিয়ে লক্ষ্যে শট নেন। কিন্তু গুলাকসি সহজেই তাকে ফিরিয়ে দেন।
ম্যাচের সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল ৪৩ মিনিটে। জোতার চমৎকার ক্রস থেকে বল নিয়ে ফের্নান্দেস তা পাঠান রোনালদোর কাছে। তার সামনে ছিলেন শুধু গোলকিপার, কিন্তু ছয় গজ দূর থেকে তার নেওয়া শট বিস্ময়করভাবে ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়।
বিরতি থেকে ফিরেই বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া পেপের শট ফিরিয়ে দেন গুলাকসি। ৫৯ মিনিটে ছোট বক্সের সামনে বল পেয়ে নিচু ড্রাইভ করেন ফের্নান্দেস। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা মাঠের বাইরে পাঠান হাঙ্গেরিয়ান গোলকিপার।
৭৩ মিনিটে জোড়া সেভে পর্তুগালকে রক্ষা করেন প্যাট্রিসিও। এর সাত মিনিট পর পর্তুগালের জালে বল জড়ায় হাঙ্গেরি। কিন্তু শন লক্ষ্যভেদের আগে অফসাইডে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত রাফায়েল গুয়েরেইরোর গোলে এগিয়ে যায় পর্তুগিজরা। রাফা সিলভার শট প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে সোজা চলে যায় গুয়েরেইরোর কাছে। তিনি গোলমুখে শট নেন, তারও শট প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে গুলাকসিকে দিকভ্রষ্ট করে জালে জড়ায়।
দুই মিনিট পর ডিবক্সের মধ্যে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগায় পেনাল্টি পায় চ্যাম্পিয়নরা। ৮৭ মিনিটের পেনাল্টি থেকে বুলেটগতির শটে গোল করেন রোনালদো। তাতে ইউরোর ইতিহাসের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা হলেন তিনি। টপকে যান ৯ গোল করা ফ্রান্সের সাবেক গ্রেট মিচেল প্লাতিনিকে।
এখানেই থেমে থাকেননি জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে রাফার সঙ্গে ওয়ান-টু পাসের পর গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে জোড়া গোল করেন রোনালদো। এটি ছিল তার ১০৬তম আন্তর্জাতিক গোল। আর চারটি গোল করলে ইরানের আলী দাইয়িকে (১০৯) পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়বেন তিনি।
এই ইউরোর মৃত্যুকূপ হিসেবে পরিচিত ‘এফ’ গ্রুপে দারুণ শুরু হলো পর্তুগালের। আগামী ১৯ জুন পরের ম্যাচ খেলবে তারা জার্মানির বিপক্ষে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তারা লড়বে গতবারের রানার্সআপ ফ্রান্সকে।