সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মাসব্যাপী ইজিবাইকের লাইসেন্স বই বিতররণ কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। এ সময়ের মধ্যে প্রায় আট হাজার লাইসেন্স বই বিতরণ করা হয়েছে। বাকী প্রায় চারশ ইজিবাইকের লাইসেন্স কবে নাগাদ বিতরণ করা হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এরা কেসিসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে লাইসেন্স বই গ্রহণ করতে আসেনি। তবে ইজিবাইক বা পে-অর্ডারের ফটো কপি হারিয়ে গেছে সংক্রান্ত প্রায় অর্ধশত ইজিবাইক চালক সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেছেন। এটা নিষ্পত্তিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা সমাধান করতে দেরী হচ্ছে। কারণ এক ইজিবাইকের চলাচলের অনুমতিপত্র একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে তা হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতারক চক্র থানায় জিডি করেছেন। এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে বেশ জটিল বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক খালিশপুর প্রভাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে নগরীর ইজিবাইক চালকদের মাঝে লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। প্রথম দিন ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের লাইসেন্স বই বিতরণ করেন। এ বিতরণ কার্যক্রম চলে গত ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এবার ৭৮৯০টি লাইসেন্সন বই বিতরণ করার জন্য টার্গেট করা হয়। কিন্তু নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাড়ে সাত হাজার লাইসেন্স বই বিতরণ করা হয়। বাকী ৩৯০টি লাইসেন্স বই এখনও বিতরণ হয়নি। তবে কবে নাগাদ হবে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তারা বলেন, বিষয়টি মেয়রকে অবগত করা হয়েছে। তিনি সময় সুযোগ মত বাকী লাইসেন্স বই বিতরণের সময় জানিয়ে দিবেন বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছেন। কেসিসি মোট ৮২২২টি ইজিবাইক লাইসেন্স আবেদন ফরম বিক্রি করে।
লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে মেয়র বলেছিলেন, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইজিবাইক নগরীতে চলতে দেওয়া হবে না। বাইরে থেকে কোনো ইজিবাইক শহরে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে নিদের্শনাও দেওয়া হয়েছে।
ইজিবাইক লাইসেন্স বিতরণের প্রথম দিন জালিয়াতি করার দায়ে দু’জন ইজিবাইক চালককে গ্রেফতার ও দু’টি ইজিবাইক জব্দ করা হয়। এদেরকে খালিশপুর থানায় ওই সময় হস্তান্তর করা হয় বলে জানান ইজিবাইক লাইসেন্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাঈদ কামাল। এদের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো প্রকার প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কেসিসি কর্তৃপক্ষ জানান।
এদিকে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক ও নকল স্টীকার লাগানো ইজিবাইকের বিরুদ্ধে কেসিসি অভিযান শুরু করেছে। দু’ দিনের অভিযানে তারা ১০টি ইজিবাইক জব্দ করেছে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি নকল স্টীকার জব্দ করেছে। পরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। কেসিসির লাইসেন্স অফিসার (যান) রবিউল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া নগর পুলিশও লাইসেন্স বিহীন ইজিবাইকের বিরুদ্ধে সমানভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।
কেসিসির মেয়র তালুকদার আঃ খালেক বলেন, নগরীতে মাইকিং করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ইজিবাইকের লাইসেন্স বই বিতরণের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও অনেকে লাইসেন্স বই নিতে আসেননি। তাদেরকে আপাতত লাইসেন্স বই দেওয়া হবে না। তবে কিছু দিনের মধ্যে তাদের লাইসেন্স বই দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও যানজট নিরসনে ২০১৬ সালে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার ইজিবাইকের লাইসেন্সের ব্যাপারে সভা আহ্বান করেন। সভায় নগরীতে ইজিবাইকের সংখ্যা ৫ হাজারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। ওই আলোকে ৫ হাজার ইজিবাইকের চলাচলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় কেসিসি। তবে পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে কেসিসি সরে আসে। কিন্তু ওই ইজিবাইক মালিককে অবশ্যই মহানগরীর স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ মে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৬ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫শ টাকা মূল্যের ফরমে আবেদন জমা নেওয়া হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে লাইসেন্স প্রদানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।