জো বাইডেনের ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। বেশ কয়েকটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তিনি উঠিয়ে নিয়েছেন। ফিরে গেছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া বেশ কিছু বিষয়ে তিনি নজর দিতে চাচ্ছেন। যেমন আমেরিকায় মহামারীতে এ পর্যন্ত মারা গেছে চার লাখের বেশি মানুষ। এই মহামারী এবং দেশটিতে এর সূদুরপ্রসারী প্রভাব মোকাবেলা নতুন প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় সবার ওপরে থাকবে।
তার প্রথম একটি পদক্ষেপ হবে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় সরকারের সব ভবনে এবং আন্তঃরাজ্য ভ্রমণের সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্বাহী আদেশ জারি করা।-খবর বিবিসি বাংলার
তবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর যারা এতদিন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিরোধিতা করে এসেছেন, তারা যে হঠাৎ করে তাদের মনোভাব বদলাবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। আর সারা দেশে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার জন্য আদেশ জারি করার কোন আইনগত পথ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় কার্যত দেয়া নেই।
তবে প্রথম দিনে জারি করা নির্বাহী আদেশে তিনি ফেডারেল অফিসগুলোতে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাইডেন এই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে এবং তিনি বলেছেন, তিনি গর্ভনরদের মত বদলাতে রাজি করোনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করবেন।
গভর্নররা যদি তার কথা না মানেন, তা হলে মেয়র এবং পৌর এলাকার কর্মকর্তাদের প্রতি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান তিনি জানাবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। তবে সেটি কীভাবে কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে কিছু এখনও বলা হয়নি।
১০০ দিনে ১০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা
বাইডেন টিকাদান প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার করতে চান। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ১০ কোটি মানুষকে করোনার টিকার অন্তত প্রথম ডোজ দিয়ে দেওয়া।
টিকা কর্মসূচি দ্রুততার সঙ্গে করার একটা পরিকল্পনা হলো যত ভ্যাকসিন তৈরি আছে, তার একটি অংশ দ্বিতীয় ডোজের জন্য মজুদ রাখার বদলে, পুরোটাই একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া।
এ ছাড়া দ্রুত কোভিড পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু ও তা উন্নত করতে এবং জাতীয় স্তরে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ ও পিপিইর সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যকর রাখার জন্যও তিনি নির্বাহী পদক্ষেপ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা অর্থনীতি
মহামারীতে বিপর্যস্ত আমেরিকান অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের জন্য গত সপ্তাহে বাইডেন ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষের দুঃসহ মাত্রার দুঃখকষ্ট যে একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এবং এখন নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই।
এ প্যাকেজ কংগ্রেস অনুমোদন করলে তা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলে বাইডেন মনে করছেন। স্কুল নিরাপদে খোলার জন্যও এই প্যাকেজে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। বাইডেন তার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে নিরাপদ পরিবেশে স্কুল আবার চালু করতে আগ্রহী।
গত ডিসেম্বরে কংগ্রেস ৯০০ বিলিয়ন ডলারের যে আর্থিক প্যাকেজ অনুমোদন করেছিল এটি তার ওপর বাড়তি প্রণোদনা প্যাকেজ।
ট্রাম্পের কর সুবিধা বাতিল
বাইডেন তার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনায় শুধু কোভিড মোকাবেলার জন্য অর্থ সহায়তার প্রস্তাবই রাখেননি। ট্রাম্প যে কর ছাড় দিয়েছেন তা বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন।
ট্রাম্প তার ক্ষমতার প্রথম দিকে ২০১৭ সালে যে কর ছাড় অনুমোদন করেন, বাইডেনের টিম বলছে সেটি শুধু ধনী আমেরিকানদের পকেট ভারী করেছে। ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা এই ছাড়ের সুবিধা মোটেও পাননি, এই সুবিধা ভোগ করেছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা।
সীমান্তপ্রাচীর নির্মাণ বন্ধ
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট মেয়াদের আরেকটি বহুল আলোচিত প্রকল্প আমেরিকা আর মেক্সিকোর মাঝখানে দেয়াল তোলা- সেই নির্মাণকাজও বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বলেছেন এই প্রকল্প অর্থের অপচয় এবং যেখানে প্রকৃত হুমকি মোকাবেলায় অর্থের প্রয়োজন এই প্রকল্পের কারণে সেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
শপথ নেওয়ার পর পরই জারি করা নির্বাহী আদেশে তিনি এই প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাইডেন প্রশাসন বলেছে, সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের বদলে অভিবাসনের বৈধতা যাচাইয়ের কর্মসূচি গড়ে তোলার জন্য তারা কেন্দ্রীয় তহবিল বরাদ্দ করতে আগ্রহী।
বর্ণবাদ ও ফৌজদারি বিচারে সংস্কার
কোভিড, অর্থনীতি এবং জলবায়ুর পর চতুর্থ স্থানে রয়েছে বর্ণবাদের সমস্যা। বাইডেন বলেছেন, তিনি দ্রুত এই সমস্যা মোকাবেলায় কাজ শুরু করবেন।
আবাসন, স্বাস্থ্যসেবাসহ যেসব ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্য প্রকট, সেসব ক্ষেত্রকে তিনি অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রথম ১০০ কার্যদিবসের মধ্যে বাইডেন পুলিশ বিভাগের সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি পুলিশের কার্যকলাপের ওপর নজরদারির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি সংস্থা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।